বই পড়ার প্রয়োজনীয়তা রচনা

ছাত্র-ছাত্রী ভাই ও বোনদের জন্য বই পড়ার প্রয়োজনীয়তা রচনা নিয়ে এলাম আজকের পোস্টে। রচনাটি ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত সকল ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য প্রয়োজন হতে পারে। চলুন শুরু করা যাক বই পড়ার প্রয়োজনীয়তা রচনা।

বই পড়ার প্রয়োজনীয়তা রচনা
পোস্ট সূচিপত্র

বই পড়ার প্রয়োজনীয়তা রচনা

কিছু কিছু রচনা রয়েছে যেগুলো পাঠ্য বইয়ে ভালো তথ্যসমৃদ্ধ হয় না। তাই ছাত্র ছাত্রীরা অনলাইনে বিভিন্ন রকম রচনা খুঁজে থাকেন। তেমনি একটি রচনা নিয়ে এলাম ছাত্র-ছাত্রী ভাই ও বোনদের জন্য। রচনাটি সংক্ষিপ্ত ও পয়েন্ট আকারে লেখা হয়েছে, শেষ পর্যন্ত পড়ে দেখুন অবশ্যই এটি আপনার পছন্দ হবে। রচনাটির নাম বই পড়ার প্রয়োজনীয়তা।


বই পড়ার প্রয়োজনীয়তা রচনায় ব্যবহৃত পয়েন্টসমূহ

১.ভূমিকা
২.বই পড়া ও কাব্য চর্চা 
৩.বইয়ের বিকাশ
৪.বই পড়ার প্রয়োজনীয়তা 
৫.বই মানুষের বিশ্ব সঙ্গী 
৬.বই পড়া এবং আনন্দ লাভ 
৭.সভ্যতা ও সংস্কৃতিতে বইয়ের ভূমিকা 
৮.ব্যক্তিত্ব বিকাশে বই এর ভূমিকা 
৯.বই নির্বাচনের সতর্কতা 
১০.উপসংহার 

“বই পড়ার প্রয়োজনীয়তা”


ভূমিকা: "বই হচ্ছে অতীত ও বর্তমানের মধ্যে বেঁধে দেওয়া সাকোঁ" - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 
মানুষ সামাজিক জীব। তাই মানুষ প্রতিনিয়ত করলে সংগ ও সান্নিধ্য  কামনা করে। আর বই হচ্ছে মানুষের সর্বশ্রেষ্ঠ এবং বিশ্বস্ত সঙ্গী। বই হলো বিশ্বাসের অঙ্গ, বই মানবজাতিকে টিকিয়ে রাখিবার জন্য জ্ঞান দান করে। এজন্য বইকে সমাজের রক্ষাকবচ বলা হয়। বই পড়ে মানুষ তার জীবনের অনাবিল শান্তি লাভ করে। 

বই পড়া ও কাব্যচর্চা: আধুনিক কালে যান্ত্রিকতা মানুষকে যতই আঁকড়ে ধরে রেখেছে বই পড়া ও কাব্য চর্চার গুরুত্ব ততই বৃদ্ধি পেয়েছে। যার জীবনে সাহিত্য চর্চার কোন ভূমিকা নেই,তার জীবনের সফলতার কোনো ছোঁয়া থাকে না। সাহিত্যচর্চা,বই পড়া,কাব্য চর্চায় যে সম্পৃক্ত থাকে না সে জীবনের অনেক বড় আনন্দ থেকে বিচ্যুত হয়। যে মানুষে বই পড়া কে সময়ের অপচয় বলে মনে করে এটা হচ্ছে তার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল ধারণা। 

"ভালো বন্ধু, ভালো বই এবং একটি শান্ত বিবেক:একটি আদর্শ জীবন" -মার্ক টোয়েন 


বইয়ের বিকাশ :"বই পড়া মানে গত শতাব্দীর লোকের সাথে আলাপ করা" -দেকার্ত 

বই মূলত জ্ঞানের জ্ঞান জ্ঞানসাধনার  ফসল। সভ্যতার পর্যায়কালে গুণী জ্ঞান সাধকগণ তাদের অভিজ্ঞতা লব্ধ করতো বইয়ের মাধ্যমে,প্রাচীনকালের ইতিহাস বইয়ের মাধ্যমে তার পরবর্তী প্রজন্মে পৌঁছানো হয়। সভ্যতার বিকাশের এক পর্যায়ে মানবজাতির তার চিন্তাভাবনা, হৃদযয়ানুভূতি, অভিজ্ঞতা লব্ধ জ্ঞান পরবর্তী প্রজন্মের কাছে পৌঁছানোর জন্য গ্রন্থ রচনার আশ্রয় নিল। এভাবে শুরু হয় বইয়ের বিকাশ।বই হচ্ছে জ্ঞানের ভান্ডার,জ্ঞানের মহাসমুদ্র।বই শুধুমাত্র অতীতকালের চিহ্ন সমূহ বা ঘটনাবলীই নয়, এমনকি বর্তমান যুগের কেন আহরণের দ্বার উন্মুক্ত করেছে। 

বই পড়ার প্রয়োজনীয়তা: বই হচ্ছে জ্ঞানের ভান্ডার। সাহিত্যচর্চা মানুষকে স্বশিক্ষায় সুশিক্ষিত হতে সাহায্য করে। সাহিত্যচর্চা মানুষের মাঝে চিন্তার দক্ষতা বাড়ায়,মস্তিষ্কের কার্যদক্ষতা বৃদ্ধি করে। জ্ঞান অর্জনের জন্য বই পড়ার কোনো বিকল্প নেই। বই পড়ার মাধ্যমে নির্মল জ্ঞানের সন্ধান করাই জ্ঞানী ব্যক্তির কাজ। সাহিত্য চর্চা একজন মানুষকে আদর্শ ব্যক্তিত্ব অর্জনে সহায়তা করে। 
 "একটি ভালো বইয়ের কখনোই শেষ বলতে কিছু নেই " -আর ডি কামিং 

বই হলো মানুষের সম্পূর্ণ ব্যক্তিত্বের প্রতিফলন,তাই যুগে যুগে বই মানুষের জ্ঞানের ভান্ডারী পরিণত হয়েছে। এর প্রয়োজনীয়তা,উপকারিতা অসীম। 


বই মানুষের বিশ্ব সঙ্গী: মানুষের নিঃসঙ্গতার উত্তম সঙ্গী হলো বই। বইয়ের মত বিশ্বস্ত বন্ধু আর নেই। একটি বই একশটি বিশ্বস্ত বন্ধুর সমান।এই সংঘাতময় জীবনে একমাত্র বই পারে জীবনের সকল ক্লান্তি মুছে দিয়ে প্রশান্তির পরশ বুলিয়ে দিতে।ভালো বইয়ের সাহচর্য আছে এমন কোন মানুষকে বন্ধুহীন বলা যায় না। সাহিত্য চর্চা এমন একটি অভ্যাস যা মানুষের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে। বই হল সবচেয়ে শান্ত ও ধ্রুবক বন্ধু,তারা পরামর্শ দাতাদের মধ্যে সহজলভ্য এবং জ্ঞানী শিক্ষকদের মতো সবচেয়ে ধৈর্যশীল।সাহিত্য চর্চা একজন মানুষকে আদর্শ রূপে গড়ে তুলতে সাহায্য করে,এ কারণেই বইকে মানবজাতির সর্বশ্রেষ্ঠ সঙ্গী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। 

বই পড়া এবং আনন্দ লাভ: বই পড়ার আনন্দ ও উপকারিতা সম্পর্কে মহান ফ্রেডলীক ডগরাস বলেছেন, "আপনি একবার পড়তে শিখলে,আপনি চিরতরে মুক্ত হবেন" 

পড়ার অভ্যাস অর্জন করা মানে জীবনের সকল দুঃখ-কষ্ট থেকে নিজের জন্য আশ্রয় তৈরি করা।মানব জাতির যত বেশি সাহিত্য চর্চা করবে তত বেশি শিখবে,তত বেশি জানবে,তত বেশি আনন্দ পাবে এবং তত বেশি সফলতা অর্জন করতে পারবে। উতকৃষ্ট বই মানবজাতির অনাবিল আনন্দের অফুরন্ত উৎস।জাগতিক সকল সংঘাত,সমস্যার ঊর্ধ্বে বই মানুষের জীবনে আনন্দ নিয়ে আসতে পারে। বই মানুষকে সংগ্রামের যান্ত্রিকতা থেকে বিচ্ছিন্ন করে,প্রশান্তির জগতে নিয়ে আসে।এটি সকল সংকীর্ণতা, ব্যর্থতা, অসত্য,অকল্যান  থেকে মানবমনকে মুক্ত করে দেয়। এজন্যই ভিনসেন্ট স্টারেট বলেছেন, "When we buy a book,we buy a pleasure" সকল ধরনের বেদনা,হতাশা,মানসিক অশান্তিতে বই নানাভাবে আমাদের আনন্দের সঞ্চার করে। 

সভ্যতা ও সংস্কৃতিতে বইয়ের ভূমিকা: বই সভ্যতা ও সংস্কৃতির অসাধারণ এক ভূমিকা।অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের জ্ঞান-বিজ্ঞানের সেতুবন্ধন হচ্ছে সাহিত্য।প্রাচীনকাল থেকে আজ পর্যন্ত সভ্যতা ও সংস্কৃতি যে ধারায় প্রচলিত হয়েছে তা বই পড়ার মাধ্যমে জানা যায়।সভ্যতা ও সংস্কৃতি সম্পর্কিত জ্ঞান অর্জনের অন্যতম মাধ্যম হলো বই। যুগে যুগে যে সব মহাজ্ঞানী,মনীষী সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশ অবদান রেখেছেন তাদের সাথে আমরা পরিচিত হতে পারি গ্রন্থ পাঠের মাধ্যমে। আমরা হোমোর,দান্তে,মাদাম কুরি,প্লেটো,এরিস্টটল, গ্যালিলিও, জগদীশচন্দ্র বসু ইত্যাদি মহা গুণী ব্যক্তিদের সান্নিধ্য লাভ করতে পারব সাহিত্য চর্চায়।আমাদের জীবন বই দিয়ে ঘেরা নয় ঠিকই,তবেজীবনকে বুঝতে হলে, সফলতা অর্জন করতে হলে,সভ্যতা ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে হলে বইয়ের কোন বিকল্প নেই। 


ব্যক্তিত্ব বিকাশে বইয়ের ভূমিকা: মানব জীবন প্রবাহের যাবতীয় ভাব অনুভূতি জানার প্রবল আগ্রহ মানুষকে বইমুখী করে।বই মানুষ কি জ্ঞান-বিজ্ঞানের নানান শাখার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। বই কুসংস্কারচ্ছন্ন মনকে শুদ্ধ করে তোলে,মানুষ খুঁজে পায় আদর্শ মানুষ হওয়ার পথ। বই পড়ার অভ্যাস মানুষের মানসিক শান্তির অন্যতম একটি কারণ। বই পড়ার গুরুত্ব সম্পর্কে মহান ব্যক্তি  মার্কাস টুলিয়াস সিসারো বলেছেন,
"মানুষের জীবনে বই ছাড়া একটি কক্ষ আত্মা ছাড়া দেহের মত"
সাহিত্যচর্চা একজন মানুষকে স্বশিক্ষায় সুশিক্ষিত করে। সাহিত্য চর্চায় মানুষ নিজের পছন্দমত মতো বই পড়ে নিজের ব্যক্তিত্ব উপলব্ধি করতে পারে।বই পড়া হচ্ছে মস্তিষ্কের শান্তি।বইয়ের লেখাগুলো হয় নিষ্পাপ বৃত্তি যা মানুষকে দুষ্কর্ম থেকে নিজেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। 

বই নির্বাচনে সতর্কতা: একটি ভালো বই পাঠকমনের সর্বোচ্চ উৎকর্ষ সাধন করতে পারে,প্রিয় কবির রচিত প্রিয় কবিতার একটি চরণ পাঠকমনে মধুর আবেশ ছড়িয়ে দিতে পারে। অপরদিকে একটি বাজে বই মানুষকে অন্ধকার জগতে ঠেলে দেয়।তাই বই নির্বাচনে সতর্কতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সাহিত্যিক মানসিকতা নিয়ে বই নয় বরং ব্যবসায়িক মানসিকতা নিয়ে যেসব বই ছাপানো হয় সেসব বই পড়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কেননা এ সকল বই আমাদের মনকে পরিশুদ্ধ না করে,বিষাক্ত করে তোলে। যে সকল বই আমাদের মনকে প্রশান্তি দেয়,মনকে প্রফুল্ল করে তোলে,মনের বিকাশে সহায়ক সে সকল বই নির্বাচন করতে হবে। 

উপসংহার: মানুষের বিশ্বস্ত ও পরীক্ষিত বন্ধু হলো বই। বই মানুষের জীবনকে আদর্শ রূপে গড়ে তুলতে সাহায্য করে। বিখ্যাত ঔপন্যাসিক তলস্তয় বলেছেন,"জীবনে তিনটি বস্তুই বিশেষভাবে প্রয়োজন,আর তা হলো বই, বই এবং  বই"।সত্য, সুন্দর ও কল্যাণের স্পর্শময় জীবন গঠনে বই পড়ার গুরুত্ব অপরিসীম।

শেষ কথা : বই পড়ার প্রয়োজনীয়তা রচনা

প্রিয় পাঠক, পুরো পোষ্টটি পড়ে বই পড়ার প্রয়োজনীয়তা রচনাটি অবশ্যই আপনার ভালো লেগেছে। রচনাটি বারবার করে আত্মস্থ করে নিন আর পরীক্ষায় শতভাগ নাম্বার প্রাপ্তির জন্য খাতায় সুন্দর করে লিখুন। রচনাটি ভালো লাগলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন। আর অন্য কোন বিষয়ে রচনা প্রয়োজন হলে অবশ্যই কমেন্টে জানাতে পারেন।


লেখক :    জান্নাতুন নাবিলা
            আজিজুল হক কলেজ, বগুড়া।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ফ্লোনেস্ট বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url