মহিলাদের সুতিকা রোগের ঔষধ
সুতিকা রোগ কি? সুতিকা রোগের কারণ, লক্ষণ, প্রতিকার, চিকিৎসা ও মহিলাদের সুতিকা রোগের ঔষধ এবং খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে জানতে চান? তাহলে সঠিক জায়গায় এসেছেন। পোস্টটি শেষ পর্যন্ত পড়ে মহিলাদের সুতিকা রোগ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন।
পোস্ট সূচিপত্র
সুতিকা রোগ কি?
সুতিকা রোগ সাধারণত প্রসূতী মহিলাদের হয়ে থাকে। গর্ভবতী মহিলাদের প্রসব পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন নিয়ম শৃঙ্খলার মধ্যে থাকতে হয়। নব প্রসবকৃত সন্তানসহ প্রসুতীর শারীরিক পরিস্কার পরিচ্ছন্নতাসহ দৈনন্দিন খাবার দাবার ও যত্ন নেয়া উচিত। প্রসব পরবর্তী প্রসূতী মায়েদের পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা ও নিয়ম শৃঙ্খলার অনিয়নম ঘটলেই সুতিকা রোগ দেখা দেয়। রোগটি মহিলাদের জন্য খুবই বিরক্তিকর ও অস্বস্থীকর একটি রোগ। এই পোস্টে সুতিকা রোগ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। এবার চলুন সুতিকা রোগের কারণ সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক।
আরো পড়ুন : জন্ম নিয়ন্ত্রণ বড়ি খাবার নিয়ম
সুতিকা রোগের কারণ
পূর্বেই বলা হয়েছে প্রসূতী মহিলাদের স্বাভাবিক নিয়ম যদি কোন করানে অনিয়ম ঘটে বা যত্নের অভাব হয় তবে সুতিকা রোগ দেখা দিতে পারে। তাহলে বোঝা যাচ্ছে যে, কোন ভাবেই প্রসূতির স্বাভাকিব নিয়মগুলো অনিয়ম করা বা যত্নের অভাবই হলো সুতিকা রোগের মূল কারণ।
প্রসূতির আহারজনিত অনিয়ম, শরীরে অধিক বাতাস লাগা বা ঠান্ডা লাগানো। ভাল করে রান্না না করা খাবার খাওয়া, ক্ষুধা না থাকা সত্যেও জোড় করে খাওয়া, গুরুপাক জাতীয় দ্রব্য খাওয়া, প্রভৃতি কারণে নানা প্রকার সূতিকা রোগ জন্মে থাকে। অপরিছন্ন সূতিকাগৃহ বা প্রসূতীর ঘর পরিস্কার পরিছন্ন না থাকাও সূতিকারোগের একটি প্রধান কারণ।
সুতিকা রোগেরর লক্ষণ
এ পর্যন্ত আমরা সুতিকা রোগ কি এবং সুতিকা রোগের কারণ সম্পর্কে জানলাম। এবার আমরা জানবো সুতিকা রোগের লক্ষণ সম্পর্কে।
জ্বর, শোথ, অজীর্ণ রোগ, দেহের পীড়া রোগ, শূলানো, শারীরিক দুর্বলতা, কাঁশি, পিপাসা বেড়ে যাওয়া, শরীর ভার হওয়া, সমস্থ শরীরে ব্যাথা এবং নাকমুখ দিয়ে কফ বের হওয়া এই সকল লক্ষণগুলো প্রসব পরবর্তী সময়ে প্রসূতী মায়ের দেখা দিলে তাকে সূতিকা রোগ বলে। তবে সবার জন্য সবগুলো লক্ষণ একবারে দেখা যায় না। কোন প্রসূতির বর্ণিত লক্ষণগুলোর একটি বা দুটি দেখা দিলেও সেই প্রসুতীর সুতিকা রোগ হয়েছে বলে ধরা হয়।
আরো পড়ুন : বুকের দুধ বৃদ্ধির ঘরোয়া ও প্রাকৃতিক উপায়
সুতিকা রোগের প্রতিকার
সুতিকা রোগের প্রতিকার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জেনে নেয়া দরকার। মহিলাদের সূতিকারোগ থেকে রক্ষা করতে হলে, প্রথমতঃ প্রসূতী মায়ের ঘর নির্বাচন বিষয়ে মনোযোগ দিতে হবে। প্রসূতীর ঘর অবশ্যই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও শুষ্ক হতে হবে। ঘরের মাপ অন্ততঃ ৭-৮ হাত লম্বা, ৫-৬ হাত উঁচু এবং কয়েকটি বড় জানালা বিশিষ্ট হওয়া উচিত । ঘরের মেঝে অবশ্যই সমতল হতে হবে। কোনভাবেই ঘরে ধোঁয়ার সৃষ্টি করা যাবে না। প্রসূতিকে শোয়ার জন্য কাঠের খাট ব্যবহার করা উচিত। শিশুর মল-মূত্র ও সেনিটেশনের কাজে ব্যবহৃত জিনিসপত্রগুলো সর্বদা দূরে ফেলে দিতে হবে। রাতে বা দিনে শীতল বাতাসের সময় জানালা বন্ধ রাখতে হবে আর দিনের বেশিরভাগ সময় বিশুদ্ধ বায়ু চলাচলের জন্য জানালা খুলে রাখতে হবে।
প্রসূতী মায়ের শরীরের যত্ন নিতে হবে, সর্বদা পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। তার খাবার তালিকায় প্রয়োজনীয় পুষ্টি সমৃদ্ধ হতে হবে। কোন ভাবেই ভাজা পোড়া খাবার, বেশি ফাইবার যুক্ত খাবার বা যে গুলো হজম হতে বেশি সময় লাগে সেগুলো খাওয়া যাবে না। প্রসব পরবর্তী সময়ে প্রতিটি মহিলাকে এভাবে নিয়ম মেনে প্রসূতিকাল অতিবাহিত করাতে পারলে সুতিকা রোগের প্রতিকার করা সম্ভব হবে।
আরো পড়ুন : গর্ভাবস্থায় চালতা খাওয়ার উপকারিতা
সুতিকা রোগের চিকিৎসা
পূর্বেই বলা হয়েছে যে, প্রসবাস্তে প্রসূতির আহারজনিত সমস্যার কারণে, শরীরে হিম ও শীতল বায়ু লাগার ফলে, অপরাপর ঠান্ডালাগা জনিত কারণে নানারকম সূতিকা রোগের উদ্ভব হয়ে থাকে। জ্বর, গ্রহণী, শূল, অতিসার, শোথ, অগ্নিমান্দ্য, কফস্রাব, গাত্রভার, বেদনা প্রভৃতি নানাবিধ লক্ষণ প্রকাশ পায়।
বর্তমানে এ রোগের বিভিন্ন চিকিৎসা আবিষ্কৃত হয়েছে। তবে মহিলাদের সুতিকা রোগের চিকিৎসা হিসেবে আয়ুবেদিক, লতা-পাতা, ভেষজ বা প্রাকৃতিক চিকিৎসা গ্রহণ করা উচিত। প্রসব পরবর্তী সময়ে প্রসূতি মা তার শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ায়। আর তাই এই সময় প্রসূতি মা'কে সুস্থ ও রোগমুক্ত থাকতে পার্শপ্রতিক্রিয়াযুক্ত ঔষধসমূহ এড়িয়ে চলা উচিত। আয়ুবেদিক চিকিৎসা, লতা-পাতা বা ভেষজ ও প্রাকৃতিক চিকিৎসায় কোন পার্শপ্রতিক্রিয়া নেই। আর তাই এ সময় সুতিকা বা অন্য কোন রোগ দেখা দিলে ভেষজ ও প্রাকৃতিক চিকিৎসা বেছে নেয়াই উত্তম হবে।
এ পর্যায়ে আমরা মহিলাদের সুতিকা রোগের ঔষধ সম্পর্কে আলোকপাত করবো। আগেই বলা হয়েছে এ সময় পার্শপ্রতিক্রিয়ামুক্ত ঔষধ ব্যবহার করা উচিত। তাতে করে নবজাতক শিশু বুকের দুধ পরিপূর্ণ মাত্রায় পেয়ে থাকে। এখানে আমরা আয়ুবেদিক, লতা-পাতা, ভেষজ বা প্রাকৃতিক ঔষধ সম্পর্কে বলবো। এই ঔষধগুলোর উপদানসমূহ সম্পর্কে জানা না থাকলেও বিভ্রান্ত হবেন না। বাংলাদেশের ছোট বড় সকল হাট বাজারে লতা-পাতা, ভেষজ বা প্রাকৃতিক উপাদান বা আয়ুবেদিক দোকানগুলোতে এই উপাদান গুলো সহজলভ্য। বর্ণিত উপাদানগুলো সেই দোকান থেকে সংগ্রহ করে নিম্নে বর্ণিত যে কোন একটি ঔষধ প্রস্তুত করে সুতিকা রোগাক্রান্ত প্রসূতীকে খাওয়াতে পারেন।
মহিলাদের সুতিকা রোগের ঔষধ : ১
গুলঞ্চ, শুষ্ঠী, ভদ্রমুখ, ঝিন্টি, ইকড় তৃণ, স্বল্প পঞ্চমূল ও মুথা এই সকল দ্রব্যের শীতল ক্কাথ মধুর সাথে মিশিয়ে খেলে সুতিকা রোগ নিবারিত হয়।
মহিলাদের সুতিকা রোগের ঔষধ : ২
ঝিন্টি, বেতসমূল, পুষ্করমূল বইচ বৃক্ষের মূল, কুলখ কলাই ও দেবদারু এই সকল দ্রব্যের ক্বাথে সৈন্ধব লবণ ও হিঙ্গু মিশিয়ে সেবন করলে মহিলাদের সুতিকা রোগ সেরে যায়।
মহিলাদের সুতিকা রোগের ঔষধ : ৩
দশমূলের ক্কাথ পান করলে, সুতিকা জ্বর ও সূতিকা জনিত শূল নিবারিত হয়।
মহিলাদের সুতিকা রোগের ঔষধ : ৪
ঝিন্টির ক্কাথ পিপুল চূর্ণ মিশিয়ে সেবন করলে সুতিকাজনিত শোথ, জ্বর ও অজির্ণ রোগ আরোগ্য হয়।
মহিলাদের সুতিকা রোগের ঔষধ : ৫
দশমূল, চাকুলে, শালপাণি, বৃহতী, গোক্ষুর, কন্টিকারী নীল ঝাঁটীমূল, গন্ধতাদুলের মূল, শুঁঠ, মুথা, গুলঞ্চ এই সকল দ্রব্যের ক্কাথ সেবন করালে সুতিকাজনিত জ্বর ও দাহ সমন্বিত সূতিকা বিনষ্ট হয়।
মহিলাদের সুতিকা রোগের ঔষধ : ৬
গন্ধক, পারদ, অভ্র, তাম্র প্রতিটি দ্রব্য ১৫ গ্রাম করে নিয়ে থানকুণীর রসে পিষে, মাষকলাই আকারের এক একটি বড়ি তৈরি করে নিতে হবে। তারপরে ঐ বড়িগুলি ছায়ায় শুকিয়ে নিয়ে রাখতে হবে। এই বড়ি দিনে তিন বার সেবনে সুতিকা রোগাক্রান্ত নারীর নানাবিধ উপসর্গ দূর হয়।
আরো পড়ুন : মেয়েদের বাধক রোগের ঔষধ ও চিকিৎসা
সুতিকা রোগাক্রান্ত মহিলার খাদ্যাভ্যাস
সাধারণত সূতিকাবস্থায় শালি ধানের চালের ভাত, মসূর ডালের যুষ, বেগুন, কচি মূলা, ডুমুর, পটল ও কাঁচাকলার তরকারী খাওয়া উচিত। গ্যাস সমৃদ্ধ, ব্যাথা বাড়ায় এমন খাবার পরিহার করতে হবে। প্রচুর শাক সবজি খাওয়া চালিয়ে যেতে হবে। শীতলসেবা বা ঠান্ডা লেগে যায় এমন কাজ বা এমন সেবা করা সূতিকা রোগে বিশেষ ভাবে নিষিদ্ধ। এ রোগাক্রান্ত মহিলাকে প্রায় ৪ মাস পর্যন্ত খুব সাবধানে থাকা একান্ত প্রয়োজন।
উপসংহার : মহিলাদের সুতিকা রোগের ঔষধ
প্রিয় পাঠক, মহিলাদের সুতিকা রোগের ঔষধ সম্পর্কিত এই পোস্টটি পরে নিশ্চই আপনি সুতিকা রোগ কি? সুতিকা রোগের কারণ, সুতিকা রোগেরর লক্ষণ, সুতিকা রোগের প্রতিকার, সুতিকা রোগের চিকিৎসা, মহিলাদের সুতিকা রোগের ঔষধ, সুতিকা রোগাক্রান্ত মহিলার খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। এমন আরো অন্যরকম কোন রোগ সম্পর্কে জানতে আমাদের সাইটটি নিয়মিত ভিজিট করতে থাকুন। পোস্টটি ভাল লাগলে বন্ধুদের সাথে সেয়ার করতে পারেন। কোন প্রশ্ন থাকলে অবশ্যই কমেন্ট করবেন।
ফ্লোনেস্ট বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url