বুকের দুধ বৃদ্ধির ঘরোয়া ও প্রাকৃতিক উপায়
বুকের দুধ বৃদ্ধির ঘরোয়া ও প্রাকৃতিক উপায় সংক্রান্ত শতভাগ কার্যকরী কিছু প্রাকৃতিক, ভেষজ, আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা ও ঔষধ রয়েছে। সে ব্যাপারে আজকের এই পোস্ট, সদ্য প্রসবকৃত প্রসুতিদের জন্য বুকের দুধ বৃদ্ধিতে কার্যকরী কিছু চিকিৎসা ও পরামর্শ পেতে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
পোস্ট সূচিপত্রবুকের দুধ বৃদ্ধির জন্য ঘরোয়া ও প্রাকৃতিক উপায়
নতুন প্রসূতি বা সদ্য প্রসবকৃত শিশুদের মা’গন তাদের সন্তানদের বুকের দুধ খাওয়াতে খুবই পছন্দ করেন। আর তাই তারা চায় তাদের বুকের দুধ উৎপাদন সঠিকভাবে বৃদ্ধি পাক। আপনার শিশুকে যত বেশি বুকের দুধ খাওয়াবেন আপনার মস্তিষ্কের পিটুইটারি গ্রন্থির পোলাট্রিন হরমোন তত বেশি নিঃসৃত হবে এবং বুকের দুধ উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। অনেকেই ভাবেন যত বেশি পুষ্টিকর খাবার খাওয়া যাবে অত বেশি দুধ বৃদ্ধি পাবে এই ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল। তারপরেও দুগ্ধবতী মেয়েদের অবশ্যই পরিমিত সুষম খাবার খেতে হবে। শরীর হাইড্রেশনের জন্য প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। শিশু মায়ের বুকের দুধ পাচ্ছেনা বলে কোনভাবেই তাকে ফর্মুলা জাতীয় খাবার দেয়া যাবেনা। এই পোস্টের শেষে বুকের দুধ বৃদ্ধির ভেষজ ও প্রাকৃতিক ঔষধ সম্পর্কে বলা আছে, যা আপনি নিজেই আপনার বাড়িতে তৈরী করে খেতে পারেন।
আরো পড়ুন : সন্তান ধারণের সঠিক সময়
বুকের দুধ বাড়ানোর কার্যকরি উপায় সমুহ
বুকের দুধ বাড়ানোর জন্য কার্যকরি কিছু উপায় রয়েছে। নিম্নে এগুলো বর্ণনা করা হলো। মায়েদের জন্য বুকের দুধ বৃদ্ধিতে যথাযথভাবে এই পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করে চললে কোন চিকিৎসা এবং ঔষধ ছাড়াই ভালো ফলাফল পেতে পারেন।
- শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো সময় পাম্প করতে পারেন। অনেকের বুকের দুধের পরিমাণ কম থাকতে পারে এক্ষেত্রে পাম্প করা পদ্ধতি সব থেকে কার্যকরী। বাচ্চা দুধ পাচ্ছে না বলে তাকে দুধ খাওয়ানো ছেড়ে দেওয়া যাবে না ফলে আপনার শরীর দুধ উৎপাদন বন্ধ করে দিতে পারে। তাই বাচ্চাকে যত বেশি দুধ খাওয়াবেন তত বেশি দ্রুত উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।
- বাচ্চাকে দুধ খাওয়ানোর সময় একটা বিষয় নিশ্চিত করুন যে আপনার স্তনের সমস্ত দুধ খালি হয়ে গেছে। এজন্য বাচ্চাকে সময় নিয়ে অধিক সময় ধরে খাওয়াতে হবে। একটি স্তনের দুধ পরিপূর্ণভাবে খালি হয়ে গেলে অপরটি একইভাবে খালি করতে হবে। এই প্রক্রিয়াটি আপনার শরীরকে দুধ উৎপাদনের জন্য আরো বেশি পরিমাণে সংকেত দেয়। তাই বাচ্চাকে দুধ খাওয়ানোর সময় অবশ্যই বিষয়টি স্মরণ রাখতে হবে যে প্রতিটি স্তন খালি হয়েছে কিনা।
- বুকের দুধ আরো বেশি মাত্রা বৃদ্ধির জন্য আপনার শরীরকে যথাযথ হাইড্রেশনের রাখতে হবে। আর এজন্য প্রচুর পরিমাণ পানি পান করতে হবে।
- পরিমিত বিশ্রাম দুগ্ধবতী মায়েদের দুধ উৎপাদনের জন্য পরিপূরক হতে পারে। অতিরিক্ত মাত্রায় চাপ এবং বিশ্রামহীনতা একজন মায়ের দুধ উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এ সময় নিয়মিত ব্যায়াম করা বা যোগ ব্যায়াম করা সহায়ক হতে পারে।
- সাধারণভাবে ঔষধ এড়িয়ে চলুন। শিশু বুকের দুধ খাওয়ার সময় মায়েদের একটা বিষয় অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে যে সাধারণ বা সামান্য অসুস্থতায় নির্দ্বিধায় পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া যুক্ত ঔষধসমূহ সেবন করা থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকতে হবে। যে কোন প্রয়োজনে ঔষধ খেতে হলে অবশ্যই একজন স্বাস্থ্যকর্মির সঙ্গে পরামর্শ গ্রহণের মাধ্যমে সেবন করা যেতে পারে। সেই সাথে বাচ্চা বুকের দুধ খাওয়ার সময় যাবতীয় জন্মবিরতিকরণ ঔষধ বা পিলসমূহ খাওয়া বন্ধ রাখতে হবে। এই সময় জন্মবিরতিকরনের জন্য অন্যান্য পদ্ধতি সমূহ ব্যবহার করতে পারেন।
আরো পড়ুন : শিশুদের ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণসমুহ ও চিকিৎসা
মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধির জন্য ঔষধ
শিশুর জন্মের পর তার মায়ের বুকের দুধ কম পেলে বা খেতে না পেলে তার স্বাস্থ্যহানি ঘটবে এবং সেই সাথে প্রচুর কান্নাকাটি করবে। এমন পরিস্থিতিতে নিম্নে বর্ণিত মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধির জন্য ঔষধ আপনি বাড়িতে নিজেই তৈরি করে খেতে পারেন। এই ওষুধগুলো প্রাকৃতিক হওয়ায় এর কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই এবং অত্যন্ত কার্যকরী।
ঔষধ ১: রাতে ২০০ মিলিলিটার দুধে ৩০ গ্রাম মেথির গুড়ো বা বেসন ভিজিয়ে রাখুন। সকালে একটা পাত্রে ৫০ গ্রাম ঘি নিয়ে আগুনের উপর রাখুন। ঘি ভালোভাবে গরম হলে তাদে দুধে ভেজানো মেথির বেসন মিশিয়ে নিন চামচ দিয়ে ভালভাবে মিশিয়ে নামিয়ে নিন। তারপর তাতে ২০ গ্রাম গুড় মেশান। আর এই মিশ্রনটি প্রসূতি মহিলাকে ২১ দিন পর্যন্ত সেবন করালে তাদের স্তনে দুধ বৃদ্ধি পাবে। তবে একসপ্তাহের মধ্যেই এর ফলাফল প্রকাশ পাবে। এটি প্রসূতিদের জন্য একটি অত্যান্ত ভালো ঔষধ ও বুকের দুধ বৃদ্ধির ঘরোয়া ও প্রাকৃতিক উপায় হতে পারে।
আরো পড়ুন : একবার সহবাস করলে কতদিন পর্যন্ত পিল খেতে হয়
ঔষধ ২: এই ওষুধটি তৈরীর জন্য অনন্তমূলের প্রয়োজন হবে। আর অনন্তমূল হাটে-বাজারে বিভিন্ন ভেষজ ও আয়ুর্বেদিক ঔষধের দোকান গুলোতে পাওয়া যায়। ওষুধটি প্রস্তুতির জন্য যা করতে হবে তা তুলে ধরা হলো।
১২৫ গ্রাম অনন্তমূল এবং দেড় লিটার পানি, একটি মাটির হাঁড়িতে নিয়ে মৃদু আঁচে সিদ্ধ করতে হবে। আর অবশ্যই হাঁড়ির মুখ চাপা দিয়ে রাখতে হবে। প্রায় ৪০ মিনিট ধরে সেদ্ধ হওয়ার পর হাঁড়িটে আঁচ থেকে নামিয়ে নিয়ে ঠান্ডা হলে ছেঁকে নিতে হবে। তারপর এই পানি এক কাপ পরিমাণ প্রতিদিন একবার খেলে বুকের দুধ বৃদ্ধি পাবে।
উপসংহার : বুকের দুধ বৃদ্ধির ঘরোয়া ও প্রাকৃতিক উপায়
প্রিয় পাঠক, বুকের দুধ বৃদ্ধির ঘরোয়া ও প্রাকৃতিক উপায় সম্পর্কিত এই পোষ্টটি পড়ে নিশ্চয়ই আপনি জানতে পেরেছেন বুকের দুধ বৃদ্ধি ব্যাপারে পরামর্শ। আপনার শিশু যদি বুকের দুধ কম পায় সেক্ষেত্রে তার স্বাস্থ্যহানিসহ চিৎকার, চেঁচামেচি, কান্নাকাটি করতে পারে এমন পরিস্থিতিতে পোস্টে বর্ণিত ঔষধ সমূহ বাড়িতে নিজেই তৈরী করে খেতে পারেন। ভেষজ আয়ুর্বেদিক ঔষধ সমূহ ও কিভাবে মায়েদের বুকের দুধ বৃদ্ধি করা যায় সে ব্যাপারে পরামর্শগুলো ভালো লাগলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
ফ্লোনেস্ট বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url