গ্লিসারিন ব্যবহার করার সঠিক নিয়ম

গ্লিসারিন ব্যবহারের সঠিক নিয়ম কি? আমরা অনেকেই এই বিষয়টি জানিনা। বিশেষ করে শীতের সময় আমরা আমাদের ত্বক সুন্দর রাখার জন্য আমরা গ্লিসারিন ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু আপনি কি গ্লিসারিনের সম্পর্কে ভালভাবে জেনে ব্যবহার করছেন? আপনার ত্বকের উপকারিতার জন্য গ্লিসারিনের ক্ষতিকর দিকগুলো কি? সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
গ্লিসারিন ব্যবহার করার সঠিক নিয়ম
পোস্ট সূচিপত্র

গ্লিসারিন ব্যবহার করার উপকারিতা

শীতের সময় আমরা আমাদের শুষ্ক ত্বক সুন্দর করার জন্য গ্লিসারিন ব্যবহার করে থাকি। আপনি কি গ্লিসারিন ব্যবহার করার আগে এটি ব্যবহার করার উপকারিতা গুলো জেনেছেন? আমাদের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষ গ্লিসারিন ব্যবহার করার সঠিক নিয়ম বা গ্লিসারিনের ক্ষতিকর দিকগুলো কি? কোনটাই জানেনা। আমরা প্রথমে গ্লিসারিন ব্যবহার করার উপকারিতা সম্পর্কে জানব। আর এই পোস্টের শেষে জানিয়ে দেয়া হবে গ্লিসারিন ব্যবহারের সঠিক নিয়ম সম্পর্কে।
  • হাত পায়ের যত্নে
  • ঠোঁটের যত্নে
  • ত্বক মশ্চারাইজার করতে
  • ত্বকে ক্লিনজার হিসেবে কাজ করে
  • টোনার হিসেবে

হাত পায়ের যত্নে গ্লিসারিন

শীতের শুস্ক আবহাওয়ায় ত্বকের শুষ্কতা দেখা দেয়। আর তাই শীতের সময় আমাদের হাত-পায়ের শুষ্ককা দুর করতে অতিরিক্ত যত্নের প্রয়োজন হয়। কারণ শীতের এই আবহাওয়ায় আমাদের তো অনেক শুষ্ক হয়ে পড়ে। এই শুষ্ক ত্বক যদি সুন্দর করতে চাই তাহলে এক্সটা কেয়ার ছাড়া আর কোন উপায় নেই। আপনি যদি আপনার হাত পায়ের যত্নে হালকা গরম পানিতে হাফ চামচ গ্লিসারিন দিয়ে ব্যবহার করেন তাহলে এটি আপনার শুষ্ক ত্বক দূর করতে সহায়ক হবে। এছাড়া শীতে আমাদের আরও একটি কমন সমস্যা হলো হাতের এবং পায়ের গোড়ালি ফেটে যাওয়া। আপনি যদি এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে চান তাহলে ঘুমাতে যাওয়ার আগে পায়ে এবং হাতে ভালোভাবে গ্লিসারিন ব্যবহার করতে পারেন।

ঠোঁটের যত্নে গ্লিসারিন

ঠোঁটের সৌন্দর্য ধরে রাখার জন্য সাধারণত প্রাচীনকাল থেকে গ্লিসারিন ব্যবহার হয়ে আসছে। আমাদের ঠোঁট ফাটাসহ বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দূর করতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে গ্লিসারিন। চিনির দানা সাথে কয়েক ফোটা গ্লিসারিন মিশিয়ে দুই থেকে তিন মিনিট মাসাজ করলে এর উপকারিতা গুলো লক্ষ্য করতে পারবেন। অনেকেরই শীতকালে ঠোঁট বেশি কালো হয়ে যায় বা অনেকেই বিড়ি, সিগারেট খাওয়ার ফলে ঠোঁট কালে হয়ে গেছে এটি তাদের জন্য উপকারী হতে পারে। ঠোটের উপরে পড়া যেকোন কালো দাগ দূর করতে এটি বিশেষ কার্যকরী ভূমিকা রাখে।

ত্বক মশ্চারাইজড করতে গ্লিসারিন

আমরা সকলেই চাই যে আমাদের ত্বক মশ্চারাইজড থাকুক। বিশেষ করে শীতের সময় সকলের ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়। এই শুষ্ক ত্বক থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আমাদেরকে গ্লিসারিন ব্যবহার করতে হবে। আপনি যদি হালকা পানিতে সামান্য পরিমাণে গ্লিসারিন মিশিয়ে শরীরে লাগিয়ে দেন তাহলে শুষ্ক ত্বক থেকে মুক্তি পাবেন এবং আপনার ত্বক হবে মশ্চারাইজড।

ত্বকে ক্লিনজার হিসেবে কাজ করে

আমাদের ত্বকে গ্লিসারিন ক্লিনজার হিসেবে কাজ করতে পারে। বিশেষ করে গ্লিসারিন যুক্ত ফেসিয়াল ক্লিনজার গুলো ত্বককে পুরোপুরি শুকিয়ে না ফেলে ত্বক পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। আপনি যদি প্রতিদিন ফেসওয়াশের সাথে দুই ফোঁটা গ্লিসারিন মিশিয়ে সেটি ব্যবহার করেন এবং হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলেন তাহলে দেখবেন আপনার ত্বক শুষ্কতা থেকে রেহাই পাবে।

টোনার হিসেবে গ্লিসারিন

আমাদের ত্বকের জন্য গ্লিসারিন টোনার হিসেবে বেশ কার্যকরী। দিনের শুরুতে গ্লিসারিন এর সাথে হালকা গোলাপ জল মিশিয়ে ব্যবহার করুন আপনার মুখের ত্বকে। সারাদিনের জন্য ত্বক থাকবে বিশেষভাবে সুন্দর ও আদ্রতাযুক্ত। বিশেষ করে যারা সারাদিন বাইরে থাকে ঘোরাঘুরি করেন এবং বেশিরভাগ সময় রোদে থেকে কাজ করেন তাদের জন্য এই প্রক্রিয়াটি বেশ কার্যকরী।

গ্লিসারিন ব্যবহার করার সঠিক নিয়ম

কিভাবে বুঝবেন গ্লিসারিন আপনার ত্বকের জন্য ক্ষতিকর

আপনি যদি গ্লিসারিন ব্যবহার করে থাকেন তাহলে এটি ব্যবহার করার আগে কিভাবে বুঝবেন গ্লিসারিন আপনার ত্বকের জন্য ক্ষতিকর? সে সম্পর্কে জানা গুরুত্বপূর্ণ এবং জেনে নিতে হবে। কারণ অনেকের ত্বক অনেক বেশি সংবেদনশীল হয়ে থাকে যার ফলে তাদের ত্বকের ক্ষতি হয়। তাই আপনি কিভাবে বুঝবেন গ্লিসারিন আপনার ত্বকের জন্য ক্ষতিকর? সে সম্পর্কে জেনে নিন।

আমরা শীতের সময় যারা ত্বকের সৌন্দর্য ধরে রাখার জন্য গ্লিসারিন ব্যবহার করি তারা শুধু জানি এটি আমাদের ত্বকের জন্য উপকারী। কিন্তু আসলে কি গ্লিসারিন আমাদের ত্বকের জন্য ক্ষতিকর নাকি উপকারি? ময়েশ্চারাইজার হিসেবে গ্লিসারিন সহজলভ্য হলেও দীর্ঘদিন একটানা এটি ব্যবহার করা উচিত নয়। দীর্ঘ সময় ধরে গ্লিসারিন বা গ্লিসারিন মেশানো কোনো প্রসাধনী ব্যবহার করা হলে ত্বক শুষ্ক হয়ে পড়তে পারে।


ত্বকের জন্য অন্যান্য যেসব প্রসাধনী কিনে আনেন সেসবের মতো গ্লিসারিনের কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। তাই এটি নিশ্চিন্তে ব্যবহার করতে পারেন। বিশেষজ্ঞরাও এটি সুরক্ষিত বলে আখ্যা দিয়েছেন।যাঁদের ত্বক শুষ্ক, তাঁরা সমপরিমাণ গ্লিসারিন, গোলাপজল ও জলপাই তেল মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। অতিরিক্ত শুষ্ক ত্বকের ক্ষেত্রে এই মিশ্রণে গোলাপজলের পরিমাণটা অর্ধেক করে নিতে হবে।

ঠোঁট, হাত, পা এবং শরীরের অন্য যে অংশের ত্বক ফেটে যায়। রাতে ঘুমানোর আগে সেসব স্থানে গ্লিসারিন। জলপাই তেল ও গোলাপজলের মিশ্রণ লাগিয়ে রাখতে পারেন। এসব স্থানে চাইলে সরাসরি গ্লিসারিনও মাখা যাবে। তবে মিশ্রণ ব্যবহার করাই ভালো। প্রয়োজনে নখের গোড়া বা কিউটিকলেও গ্লিসারিনের মিশ্রণ লাগাতে পারেন গোসলের পর।

ব্রণের সমস্যায় গ্লিসারিন ও ক্ষতিকর দিকগুলো কি?

আমরা তো গ্লিসারিন এর উপকারিতা সম্পর্কে জেনেছি। কারণ এটি আমাদের ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করার জন্য কার্যকরী ভূমিকা রাখে। কোন জিনিস ব্যবহার করার আগে অবশ্যই তার উপকারিতার সাথে ক্ষতিকর দিকগুলো জেনে নিতে হবে। যেমন গ্লিসারিনের ক্ষতিকর দিকগুলো কি? আমরা বেশিরভাগ মানুষ সেটি জানিনা।

গ্লিসারিন তেলমুক্ত ও নন কমেডোজেনিক। তাই এটি কোনোভাবেই লোমকূপ বন্ধ করে না। তাই গ্লিসারিন ব্যবহার করলে ব্রণের সমস্যা অনেকটাই কমে। গ্লিসারিনের কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। নিশ্চিন্তে এটি ব্যবহার করা যায়। এফডিএ থেকেও গ্লিসারিনকে সেফ বা সুরক্ষিত আখ্যা দেওয়া হয়েছে। ত্বকের বিভিন্ন ক্ষত বা ফুসকুড়িও দ্রুত সারিয়ে তোলে গ্লিসারিন। ত্বকের উপর একটি সুরক্ষাকবচ তৈরি করে এটি।

যাদের ব্রণের সমস্যা আছে তারা গ্লিসারিনযুক্ত ক্লিনজার নিশ্চিন্তে ব্যবহার করতে পারেন। এমন ক্লিনজার দিয়ে মুখ পরিষ্কার করলে ত্বক কম শুষ্ক হয়। টোনার ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। যে কোনো ত্বকের জন্যই গ্লিসারিন দেওয়া টোনার ভালো। গ্লিসারিনযুক্ত টোনার ব্যবহারে ত্বকের অতিরিক্ত তেল ব্যালেন্স করে দেয় গ্লিসারিন।

গ্লিসারিন ব্যবহার করার সঠিক নিয়ম

আমরা ইতিমধ্যে গ্লিসারিন ব্যবহার করার উপকারিতা এবং গ্লিসারিনের ক্ষতিকর দিকগুলো কি? এ বিষয়গুলো সম্পর্কে জেনেছি। আপনি যদি সঠিকভাবে গ্লিসারিন এর উপকারিতা গুলো পেতে চান তাহলে আপনাকে গ্লিসারিন ব্যবহার করার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে জানতে হবে। নিম্নে সংক্ষেপে গ্লিসারিন ব্যবহার করার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।

১। গ্লিসারিন ত্বকের প্রাকৃতিক ময়শ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে। বাদাম তেলের সঙ্গে গ্লিসারিন মিশিয়ে লাগানো উচিত।
২। টোনার হিসেবে গ্লিসারিন ব্যবহার করা যায়। এর জন্য আধ কাপ গোলাপ জলে কয়েক ফোঁটা গ্লিসারিন মেশান। তার পর এতে তুলো ভিজিয়ে ত্বক পরিষ্কার করুন।
৩। ত্বক খুব বেশি নিস্তেজ হয়ে পড়লে গ্লিসারিনের সঙ্গে অ্যালোভেরা মাস্ক লাগাতে পারেন। ২ থেকে ৩টি সতেজ অ্যালোভেরা পাতার জেলের সঙ্গে ২ চামচ গ্লিসারিন মিশিয়ে নিজের মুখে লাগানো উচিত। ২০ থেকে ২৫ মিনিট রেখে মুখ পরিষ্কার করে নিন।
৪। তাৎক্ষণিক ঔজ্জ্বল্যের জন্য ১টা পাকা কলা চটকে গ্লিসারিন মিশিয়ে নিজের মুখে লাগান। ২৫ মিনিট পর্যন্ত এই প্যাক মুখে লাগিয়ে রেখে ধুয়ে নিন। নিয়মিত এই উপায় করলে মুখ উজ্জ্বল হবে।

উপসংহার: গ্লিসারিন ব্যবহার করার সঠিক নিয়ম

গ্লিসারিন ব্যবহার করার উপকারিতা, কিভাবে বুঝবেন গ্লিসারিন আপনার ত্বকের জন্য ক্ষতিকর? গ্লিসারিনের ক্ষতিকর দিকগুলো কি? গ্লিসারিন ব্যবহার করার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। প্রিয় বন্ধুরা আশা করি আপনারা উক্ত বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। যেহেতু শীতের সময় আমরা এটি ব্যবহার করি তাই এ সম্পর্কে জেনে নেওয়া জরুরী। এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল আরো পড়তে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ফলো করুন। কারণ আমাদের ওয়েবসাইটের নিয়মিত এ ধরনের আর্টিকেল প্রকাশ করা হয়।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ফ্লোনেস্ট বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url