২১ শে ফেব্রুয়ারি রচনা : আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস রচনা

২১ শে ফেব্রুয়ারি রচনা বা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস রচনা খুঁজছেন? একুশে ফেব্রুয়ারি, একুশ আমার অহংকার, একুশের চেতনা, জাতীয় জীবনে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও ২১ শে ফেব্রুয়ারি সংক্রান্ত সকল বিষয়ের উপর রচনা হিসেবে ব্যবহার করতে পুরোটা পড়ুন।

২১ শে ফেব্রুয়ারি রচনা : আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস রচনা
পোস্ট সূচিপত্র

২১ শে ফেব্রুয়ারি রচনা : আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস রচনা

বাংলাদেশের ইতিহাসের এক অনবদ্য চেতনাময় অধ্যায় হলাে ২১ শে ফেব্রুয়ারি। প্রতিবছর বাংলাদেশে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা ও শ্রদ্ধার সাথে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্বশাষিত সকল প্রতিষ্ঠান বর্ণাঢ্য আয়োজনে ২১ শে ফ্রেব্রুয়ারি ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করে থাকে। আর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আয়োজিত রচনা প্রতিযোগিতায় ২১ শে ফেব্রুয়ারি বিষয়ক রচনার প্রয়োজন হয়ে থাকে। ছোট্ট শোনামনি, শিশু-কিশোর  ও ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য আয়োজিত রচনা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য নির্দিধায় নিম্নের রচনাটি ব্যবহার করতে পারেন। আর কথা নয় চলুন শুরু করা যাক।

২১ শে ফেব্রুয়ারি রচনা

ভূমিকা

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস একটি বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত দিবস। ২১ শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস প্রতি বছর বর্ণাঢ্য আয়োজনে উদযাপিত হয়। বাংলাদেশে এই দিনটির গুরুত্ব অপরিসীম কারণ এ দিনে বাংলা ভাষা রক্ষায় ভাষা শহীদদের আত্মত্যাগকে স্মরণ করা হয়। দিনটি একটি সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য এবং ভাষাগত ঐতিহ্যের প্রমাণক হিসেবে বাংলাদেশের মানুষের পরিচয়কে সমুন্নত করে।

আরো পড়ুন : ২১ শে ফেব্রুয়ারি কবিতা একুশের নতুন কবিতা

ঐতিহাসিক পটভূমি

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের ঐতিহাসিক মূল পটভূমি হলো, ১৯৫২ সালে যখন পাকিস্তান সরকার দেশের ভাষাগত বৈচিত্র্যকে উপেক্ষা করে উর্দুকে একমাত্র সরকারী ভাষা হিসাবে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। এই ভাষাগত অবিচারের প্রতিবাদে ছাত্র, বুদ্ধিজীবী ও সাধারণ মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে বাংলাকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি জানায়। মূলত ভাষা আন্দলনের সুত্রপাত হয়েছিলো ১৯৪৮ সালে আর এর চুড়ান্ত রুপ ১৯৫২ সালে হয়েছিলো। জনসংখ্যায় বাঙালিরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও তাদের রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই এর দাবি বার বার উপেক্ষিত হতে থাকে। সেই সময়ের পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল মােহাম্মদ আলি জিন্নাহ ঘোষনা করেন যে, উর্দুই হবে এদেশের রাষ্ট্রভাষা। তার এই ঘোষনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা তিব্র প্রতিবাদ করতে থাকে। শুধুমাত্র উর্দুকেই এদেশের রাষ্ট্রভাষা নির্বাচিত করায় এর বিরুদ্ধে গণ-আন্দোলন সৃষ্টির জন্য তমদ্দুন মজলিস নামে প্রথম রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশের সর্বস্তরের মানুষ 'রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই' স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠল। এই পরিস্থিতিতে ২০ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২ তারিখে ১ মাসের জন্য ঢাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। আন্দোলন এতো তিব্র আকার ধারণ করে যে, পরের দিন বাংলার দামাল ছেলেরা, ছাত্র সমাজ ও সংগ্রামী জনগন ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ঢাকার রাজপথে মিছিল বের করে। ছাত্রছাত্রীদের সেই শান্তিপূর্ণ মিছিলটি যখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে পৌঁছা মাত্রই ঘাতক পুলিশ নির্বিচারে মিছিলটির ওপর গুলিবর্ষণ করতে থাকে। ফলে রফিক, শফিক, সালাম, বরকত, শফিউর, জব্বার ও আরও অনেক তরুণ-প্রাণ শহিদ হয়। সেদিনের সেই পুলিশের বর্বরােচিত নৃশংসতার প্রতিবাদে দেশের সর্বস্থরের জনগণ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে আর ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজপথে নেমে আসে। আন্দোলনের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। অবশেষে তদনিন্তন পাকিস্থান সরকার বাংলাকেই রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়। দুঃখজনকভাবে, ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারীতে বেশ কয়েকজন ছাত্র তাদের আত্মত্যাগই ভাষা আন্দোলনের অনুঘটক হয়ে উঠেছিলো।

দেশের প্রথম শহিদ মিনার

২১ ফেব্রুয়ারি ঘটনার পর ২৩ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫২ তারিখে প্রথম শহিদ মিনার নির্মাণ করা হয়েছিল। রাতের মধ্যেই এটি নির্মান সম্পন্ন করা হয়েছিল। ২৪ ফেব্রুয়ারি  শহিদ শফিউর রহমানের পিতাকে এনে শহিদ মিনারটি উদ্বোধন করা হয়েছিলো। ২৬ ফেব্রুয়ারি সেই মিনারটি আবার উদ্বোধন করেন সদ্য পদত্যাগকারী সংসদ সদস্য, তৎকালীন জাতীয় পত্রিকা দৈনিক আজাদের সম্পাদক আবুল কালাম শামসুদ্দিন। তারপর তৎকালীন সরকারের পুলিশ ও সেনাবাহিনী সেই দিনই মিনারটি ভেঙ্গে দেয়। ১৯৫৬ সালে পুনরায় শহিদ মিনার নির্মাণের জন্য ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয় এবং ১৯৫৬ সালে ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে ৫২ সালের সেই আন্দোললে শহিদ হওয়া আউয়াল নামক এক রিকশাচালকের ৬ বছরের মেয়ে বাছিরন এবং ২১ শে ফেব্রুয়ারি সকালে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী আবুল হসেন সরকার শহিদ মিনারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ১৯৫৬ সালেই প্রথম ২১ শে ফেব্রুয়ারিকে শহিদ দিবস ঘোষণা করা হয়। সরকার এই দিনটি যথায়থভাবে উদযাপন করে আসছে।

আরো পড়ুন : বাংলাদেশেল ষড়ঋতু রচনা

ইউনেস্কো কর্তৃক স্বীকৃতি

২১ ফেব্রুয়ারী ১৯৫২ তারিখের ভাষা আন্দোলনকে ১৯৯৯ সালে, জাতিসংঘের শিক্ষা, বৈজ্ঞানিক ও সাংস্কৃতিক সংস্থা (UNESCO) ভাষাগত বৈচিত্র্যের তাৎপর্য এবং মাতৃভাষার অধিকারকে স্বীকৃতি দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ২১ শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। বাংলাদেশ এই ঘোষণার পক্ষে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে এবং দিনটি ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের প্রচারে বিশ্বব্যাপী পালনে পরিণত হয়েছে।

জাতীয় জীবনে মাতৃভাষা দিবসের চেতনা

বাংলাদেশের মানুষের জাতীয় জীবনের প্রতিটি স্তরে মাতৃভাষা দিবসের চেতনার উপস্থিতি লক্ষ্য করা হয়। বাঙালি জাতির মনের গহিনে প্রতিটি ২১ শে ফেব্রুয়ারিতে নতুন নতুন চেতনার বিকাশ ঘটছে। আমাদের সাহিত্য, সংস্কৃতি ও কৃষ্টিতে একুশের যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে। বাংলা সাহিত্যের প্রতিটি শাখায় ২১শে'র পদচারণা দেখা যায়। কবি-সাহিত্যিকগণ একুশকে উপজীব্য করে রচনা করেছেন। অসংখ্য সাহিত্যকর্ম রয়েছে একুশের উপর ভিত্তি করে। আমাদের ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও বেশ প্রশংসিত ও সম্মানিত। সারা বিশ্বে এ দিন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস' হিসেবে পালিত হয়। আর ২০০৮ সালের ৫ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে এ দিবসকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। আর এর মাধ্যমে প্রচুর মাতৃভাষার সংরক্ষণ ও বৃদ্ধির লক্ষ্যে একুশে ফেব্রুয়ারি সমাদিৃত হয়েছে বিশ্বজুড়ে।

আরো পড়ুন : স্বদেশ প্রেম রচনা সকল ক্লাসের

বহুমুখী উদযাপন

প্রতিবছর বাংলাদেশে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা ও শ্রদ্ধার সাথে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হয়। দিনটি সাধারণত ভাষা শহীদদের সম্মানে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভ দেশের প্রতিটি শহীদ মিনারে পুষ্প স্তবক প্রদানের মাধ্যমে শুরু হয়। দেশের সর্বস্তরের মানুষ তাদের মাতৃভাষা রক্ষার জন্য যারা জীবন উৎসর্গ করেছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সমবেত হন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্বশাষিত সকল প্রতিষ্ঠান বর্ণাঢ্য আয়োজনে ২১ শে ফ্রেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করে থাকে।

২১ শে ফ্রেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসটি কেবল স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দেয়ার মধ্যেই শীমাবদ্ধ নয়।  শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্বশাষিত সকল প্রতিষ্ঠান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সভা, সেমিনার, বর্ণাঢ্য র‍্যালী, ভাষাগত বৈচিত্র্যের গুরুত্বের উপর আলোচনা সভা আয়োজন করে থাকে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে, শিক্ষার্থীদের তাদের মাতৃভাষা গ্রহণ ও উদযাপন করতে উৎসাহিত করে। কবিতা আবৃত্তি, সাংস্কৃতিক পরিবেশনা এবং ভাষার সমৃদ্ধ ঐতিহ্য প্রদর্শন করে শিল্প প্রদর্শনীর মাধ্যমে বাংলা ভাষা কেন্দ্রে স্থান করে নেয়।


উপসংহার

বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশ্বব্যাপী ভাষাগত বৈষম্য রক্ষা ও মাতৃভাষার প্রয়োজনীয়তায় অনুস্মারক হিসেবে কাজ করে। বাংলাদেশে বৈচিত্র্যময় জনসংখ্যার মধ্যে ঐক্যের বোধ জাগিয়ে তোলে, জোর দেয় যে ভাষাগত পার্থক্যকে দমন করার পরিবর্তে উদযাপন করা উচিত। দিনটি ভাষাগত নিপীড়নের বিরুদ্ধে সাংস্কৃতিক গর্ব এবং স্থিতিস্থাপকতার প্রতীক হিসাবে দাঁড়িয়েছে। এই দিবসটি বার্ষিক পালনের মাধ্যমে, বাংলাদেশ গর্বের সাথে তার সাংস্কৃতিক পরিচয় বিশ্ব দরবারে জাহির করে এবং মানব সমাজ গঠনে ভাষার গুরুত্বের বৈশ্বিক স্বীকৃতিতে অবদান রাখে।


শেষ কথা : ২১শে ফেব্রুয়ারি রচনা : আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস রচনা

বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস শুধু একটি ঐতিহাসিক ঘটনার স্মরণে নয় বরং ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধির উদযাপন যা জাতিকে সংজ্ঞায়িত করে। এটি মাতৃভাষার অধিকারের জন্য ত্যাগের প্রতিফলন এবং বিশ্বব্যাপী ভাষাগত বৈচিত্র্য রক্ষার প্রতিশ্রুতি পুনর্নিশ্চিত করার একটি দিন।

২১ শে ফেব্রুয়ারি রচনা : আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস রচনা বিষয়ক পোস্টে যে রচনাটি দেয়া হয়েছে সেটি একুশে ফেব্রুয়ারি, একুশ আমার অহংকার, একুশের চেতনা, জাতীয় জীবনে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও ২১ শে ফেব্রুয়ারি সংক্রান্ত সকল বিষয়ের উপর রচনা হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন। পোস্টটি ভাল লাগলে বন্ধুদের সাথে সেয়ার করবেন কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ফ্লোনেস্ট বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url