বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন রচনা নবম দশম শ্রেণি, এসএসসি এইচএসসি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্থরের ছাত্রছাত্রীদের জন্য ২০ পয়েন্ট রচনা নিয়ে নিন সহজ সরল ভাষায়।
পোস্ট সূচিপত্র
বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন রচনা
রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনকে বলা হয় বাংলার নারী জাগরণের অগ্রদূত। বাংলাদেশে নারী জাগরণের জন্য সর্বপ্রথম যিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন তিনি হলেন বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন ওরফে রোকেয়া খাতুন। বাংলাদেশের প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক সকল ক্লাসের ছাত্র ছাত্রীদের জন্য বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের জীবনী সম্পর্কে জেনে রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই ক্লাস 6 7 8 9 10, এসএসসি ও এইচএসসি ছাত্র ছাত্রী যারা সহজ সরল ভাষায় বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন রচনা ২০ পয়েন্ট রচনা খুঁজছেন তারা নিচের রচনাটি পড়ে দেখতে পারেন। রচনাটি পছন্দ হলে pdf ডাউনলোড করে নিতে পারেন।
ইন্টারনেটে অনেকেই বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন রচনা ২০০ শব্দ, ৫০০ শব্দ, ১০০০ শব্দ, ২০ পয়েন্ট ও ২৫ পয়েন্ট খুজে থাকেন। এখানে যে রচনাটি দেয়া হয়েছে তা অনায়াসে ২০০ শব্দ, ৫০০ শব্দ হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। তবে এখানে কয়েকটি পয়েন্ট উল্লেখ করা হয়েছে। এই পূরো রচনাটিকে ভেঙে ২০ পয়েন্ট বা ২৫ পয়েন্ট করে নেয়া যাবে। তাই যাদের বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন রচনা ২০ পয়েন্ট বা ২৫ পয়েন্ট রচনা প্রয়োজন তারা নিজের মতো করে রচনাটি অনেকগুলো পয়েন্টে বিভক্ত করে মুখস্থ করে রাখতে পারেন।
বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন রচনা
ভূমিকা
রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনকে বলা হয় বাংলার নারী জাগরণের অগ্রদূত। তিনি ১৮৮০ সালের ৯ই ডিসেম্বর রংপুর জেলার পায়রাবন্দ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর মৃত্যু হয় ১৯৩২ সালের ৯ই ডিসেম্বর কলকাতায়। তিনি এমন এক সময়ে জন্মগ্রহণ করেন যখন বাঙালি মুসলমান সমাজ, বিশেষত নারীসমাজ শিক্ষা, কর্মসংস্থান, সামাজিক প্রতিষ্ঠা সব দিক থেকে পিছিয়ে ছিল। তখন পর্দাপ্রথার কঠোর শাসনে নারীসমাজ ছিল অবরোধবাসিনী। রোকেয়া পিছিয়ে পড়া সমাজের এই বৃহত্তর অংশকে শিক্ষা ও কর্মের আলোয় আলোকিত করতে নিজের জীবনকে নিবেদন করেছিলেন। তাঁর বলিষ্ঠ প্রচেষ্টার ফলে নারী আজ শিক্ষাদীক্ষায়, কর্মক্ষেত্রে, আদালতে সকল ক্ষেত্রেই প্রতিষ্ঠা পেয়েছে।
রোকেয়ার পারিবারিক নাম রোকেয়া খাতুন। তাঁর পিতা জহির উদ্দিন মুহম্মদ আবু আলী সাবের ছিলেন একজন জমিদার। তাঁর মাতার নাম রাহাতুন্নেসা সাবেরা চৌধুরানী। রোকেয়ার দুই বোন করিমুন্নেসা ও হুমায়রা, তাঁর বড়ো দুই ভাই মোহাম্মদ ইব্রাহিম আবুল আসাদ সাবের ও খলিলুর রহমান সাবের। পারিবারিক প্রথা অনুসারে পাঁচ বছর বয়স থেকে পর্দার কঠোরতার মধ্যে রোকেয়াকে শৈশবকাল অতিবাহিত করতে হয়। শৈশবে আরবি-ফারসি-উর্দু শিক্ষার ব্যবস্থা থাকলেও রোকেয়ার পিতা বাংলা ও ইংরেজি শিক্ষার বিরোধী ছিলেন। তাছাড়া তৎকালীন সমাজব্যবস্থায় ঘরের বাইরে গিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষালাভের কোনো সুযোগ মেয়েদের ছিল না। কিন্তু মেধাবী রোকেয়ার লেখাপড়ার প্রতি ছিল প্রবল আগ্রহ। পাঁচ বছর বয়সে মায়ের সঙ্গে কলকাতায় থাকার সময়ে তিনি একজন ইংরেজ মেমের কাছে কিছুদিন লেখাপড়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। বোনের এই বিদ্যানুরাগ দেখে কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে উচ্চশিক্ষিত ভাই ইব্রাহিম সাবের ইংরেজি শেখান ব্রোকেয়াকে। পিতার কঠোর নজর এড়িয়ে রোকেয়া বড়ো দুই ভাই-বোনের সহযোগিতায় বাংলা-ইংরেজি শিক্ষায় উৎসাহী ও পারদর্শী হয়ে ওঠেন। বোন করিমুন্নেসার অনুপ্রেরণায় রোকেয়া বাংলা সাহিত্য রচনা ও চর্চায় আগ্রহী হয়ে ওঠেন। তিনি একইসঙ্গে বাংলা, ইংরেজি, উর্দু, ফারসি এবং আরবি ভাষা ও সাহিত্য আয়ত্ত করেন। ১৮৯৮ সালে বিহারের ভাগলপুরের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে রোকেয়ার বিবাহ হয়। স্বামীর নামের সঙ্গে মিলিয়ে তিনি রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন বা আর. এস. হোসেন নামে পরিচিত হন। স্বামীর ঐকান্তিক উৎসাহ ও সহযোগিতায় রোকেয়া পড়াশোনা ও সাহিত্যচর্চা অব্যহত রাখেন। ১৯০৯ সালে তাঁর স্বামীর জীবনাবসান ঘটে।
নারীশিক্ষা বিস্তার
বাংলার মুসলমান সমাজে রোকেয়া দুই ভাবে অবদান রাখেন। প্রথমত, শিক্ষাবিস্তারে এবং দ্বিতীয়ত, সাহিত্য সৃষ্টিতে। স্বামীর মৃত্যুর পর ১৯০৯ সালে ভাগলপুরে রোকেয়া তাঁর স্বামীর স্মরণে মাত্র পাঁচ জন ছাত্রী নিয়ে সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। এখান থেকে তাঁর নারীশিক্ষা বিস্তারের কার্যক্রম শুরু হয়। ১৯১১ সালে কলকাতায় স্কুলটি স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে রোকেয়া মুসলমান নারীদের সামনে আধুনিক শিক্ষার দরজা খুলে দেন। স্কুলটিতে ধীরে ধীরে ছাত্রীর সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। ১৯১৭ সালে প্রতিষ্ঠানটি উচ্চ ইংরেজি স্কুলে পরিণত হয়। রোকেয়া বাঙালি মুসলমান মেয়েদের শিক্ষিত করার জন্য কেবল স্কুলই প্রতিষ্ঠা করেননি, ঘরে ঘরে গিয়ে তিনি মেয়েদের স্কুলে পাঠানোর জন্য অভিভাবকদের অনুরোধ করেছেন। মেয়েদের স্কুলে নেওয়ার জন্য পৃথক গাড়িরও ব্যবস্থা করেন তিনি। তাঁর আন্তরিক প্রচেষ্টায় ১৯২৯ সালে কলকাতায় মুসলিম মহিলা ট্রেনিং স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়।
বাংলা সাহিত্যে রোকেয়ার আনুষ্ঠানিক পদার্পণ ঘটে ১৯০২ সালে কলকাতার 'নবপ্রভা' পত্রিকায় 'পিপাসা' নামক রচনা প্রকাশের মাধ্যমে। এরপর 'নবনূর', 'সওগাত', 'মোহাম্মদী' প্রভৃতি সমসাময়িক পত্র-পত্রিকায় তিনি নিয়মিত লিখতে থাকেন। তাঁর লেখনী তৎকালীন মুসলিম সমাজকে দারুণভাবে নাড়া দিয়েছিল। রক্ষণশীল সমাজ তাঁর যুক্তিপূর্ণ বক্তব্যকে সহজভাবে মেনে নিতে পারেনি। রোকেয়া তাঁর লেখায় যেমন নারীমুক্তির কথা বলেছেন, পুরুষতান্ত্রিক সমাজের ত্রুটিগুলোকে নির্দেশ করেছেন, একইভাবে নারীর মানসিক দাসত্বেরও সমালোচনা করেছেন। নারীর অলংকারকে রোকেয়া নাসত্বের প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করেছেন। রোকেয়া তাঁর নারীবাদী চিন্তার প্রকাশ ঘটিয়েছেন 'মতিচূর' প্রথম খণ্ড (১৯০৪) ও দ্বিতীয় খণ্ডে (১৯২২)। 'সুলতানাজ ড্রিম' (১৯০৮) তাঁর একটি ইংরেজি রচনা যা পরবর্তী কালে 'সুলতানার স্বপ্ন' নামে প্রকাশিত হয়। এই গ্রন্থটিকে বিশ্বের নারীবাদী সাহিত্যের একটি অনন্য উদাহরণ হিসেবে ধরা হয়। এছাড়া 'পদ্মরাগ' (১৯২৪) ও 'অবরোধবাসিনী' (১৯৩১) তাঁর উল্লেখযোগ্য দুটি রচনা। প্রবন্ধ, গল্প, উপন্যাসের মধ্য দিয়ে তিনি নারীশিক্ষার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন। হাস্যরস ও ব্যঙ্গ-বিদ্রুপের সাহয্যে পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীর অসম অবস্থার কথা তুলে ধরেছেন। তাঁর সকল রচনাই নারীশিক্ষা বিস্তার ও সমাজ সংস্কারের পরিপ্রেক্ষিতে রচিত।
নারী জাগরণের অগ্রদূত রোকেয়া
রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন ছিলেন একজন সমাজসচেতন, সংস্কারমুক্ত, দূরদৃষ্টসম্পন্ন প্রগতিশীল লেখক ও সমাজকর্মী। রোকেয়া মনে করতেন, পড়তে লিখতে পারাই নারীশিক্ষার উদ্দেশ্য নয়, শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য হলো নারীকে তার অধিকার লাভে সক্ষম করে তোলা। প্রকৃত শিক্ষা একজন নারীকে স্বয়ংসম্পূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলে। নারীরা যাতে অন্যের গলগ্রহ হয়ে জীবন যাপনে বাধ্য না হয়, সে-বিষয়ে তিনি নারীদের সচেতন করতে সামাজিক আন্দোলন চালিয়ে যান। শিক্ষাগ্রহণে নারীর সচেনতা বৃদ্ধির জন্য তিনি ১৯১৬ সালে 'আঞ্জুমানে খাওয়াতিনে ইসলাম' বা 'মুসলিম নারীদের সমিতি' গড়ে তোলেন। মুসলিম নারী সমাজকে সংগঠিত করতে নিখিল ভারত মুসলিম মহিলা সমিতি', 'বেগম উইমেন্স এডুকেশনাল কনফারেন্স', 'নারীতীর্থ সংস্থা' প্রভৃতি সংগঠনে যোগ দেন এবং নারীর উন্নয়নে দেশবাসীকে উৎসাহিত করেন। তিনি ধর্মীয় গোঁড়ামির বিরুদ্ধে ক্ষুরধার লেখনী ধারণ করেন। নারীর অধিকার নিশ্চিত করার জন্য পুরুষের বহুবিবাহ, নারীদের বাল্যবিবাহ এবং পুরুষের একতরফা তালাক প্রথার বিরুদ্ধে লেখনী ধারণ করেন। রোকেয়ার এই প্রচেষ্টার ফলে ১৯৬১ সালে মুসলিম পারিবারিক আইন পাশ হয়।
উপসংহার
সমাজ ও নারী কল্যাণ সাধনে রোকেয়ার অবদান অনস্বীকার্য। সমাজ ও সভ্যতার অগ্রসরতার পেছনে নারী ও পুরুষ উভয়ের ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু নারীকে পিছনে রেখে সমাজের সার্বিক অগ্রগতি যে সম্ভব নয়, তা রোকেয়া গভীরভাবে উপলব্ধি করেছিলেন। তাই রোকেয়ার সংগ্রাম ছিল পুরুষ ও নারীর সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা।
শেষ কথা: বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন রচনা
প্রিয় পাঠক, বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন রচনা টি পড়ে নিশ্চই আপনার ভাল লেগেছে। রচনাটি সহজ সরল ভাষায় সাধারণ করে প্রস্তুত করা হয়েছে যাতে করে আপনাদের প্রয়োজন অনুযায়ী ২০০ শব্দ, ৫০০ শব্দ, ১০০০ শব্দ, ২০ পয়েন্ট ও ২৫ পয়েন্ট আকারে বানিয়ে নিতে পারেন। আর যদি কেউ বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের জীবনী সংক্ষিপ্ত আকারে পেতে চান তারাও এই রচনাটি পড়ে নিতে পারেন। পোস্টটি ভাল লাগলে বন্ধুদের সাথে সেয়ার করুন, কোন প্রশ্ন থাকলে অবশ্যই কমেন্ট করবেন।
ফ্লোনেস্ট বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url