পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার রচনা

পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার রচনা খুঁজছেন? বাংলায় ২০ বা ২৫ পয়েন্টের সহজ ভাষায় সকল ক্লাসের ছাত্র ছাত্রীদের জন্য উপযোগী নিচের রচনাটি নিয়ে নিন। pdf ডাউনলোড করেও নিতে পারেন।

পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার রচনা
পোস্ট সূচিপত্র

পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার রচনা

প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের ছাত্র ছাত্রীদের জন্য বাংলা ২য় পত্রে প্রবন্ধ রচনা একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার রচনাটি বিশেষ করে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীদের জন্য খুবই গুরুত্বপুর্ণ। প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক সকল পরিক্ষায় পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার রচনাটি কমন পরার সম্ভাবনা শতভাগ। পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার রচনা ২০ পয়েন্ট ক্লাস 5 6 7 8 9 10 এসএসসি (ssc), এইচএসসি (hsc) শিক্ষার্থীদের জন্য মনে রাখা অত্যান্ত জরুরী। মাধ্যমিক স্থরের শিক্ষার্থদের জন্য এটি খুবই গুরুত্ব বহণ করে। ক্লাস 6, ক্লাস 7 ও ক্লাস 8 এর জন্য প্রবন্ধ রচনা বাংলা ২য় পত্র পরীক্ষায় লিখতেই হয় তাই তাদের জন্য বেশ কিছু প্রবন্ধ রচনা মুখস্থ রাখতে হয়। মাধ্যমিক স্থরের ছাত্র ছাত্রীরা যারা সহজ ভাষায় অনেকগুলো পয়েন্ট আকারে পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার রচনা অনলাইনে পেতে চায়, তারা নিচের রচনাটি দেখতে পরে। এটি প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্থরের সকল শিক্ষার্থীদের জন্য খুবই সাবলিল ও সহজ ভাষায় রচিত হয়েছে। আবার অনেকেই পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার রচনা pdf আকারে পেতে চায়, তারা নিচের রচনাটি pdf করে ডাউনলোড করে নিতে পারেন।

আরো পড়ুন : বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ২০২৪ প্রবন্ধ রচনা

পয়েন্টসমূহ : পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার রচনা

১। ভূমিকা, ২। পরিবেশ দূষণের শুরু, ৩। পরিবেশ দুষণের প্রকারভেদ, ৪। স্বাস্থ্যে ক্ষতিকর প্রভাব, ৫। অর্থনীতিতে ক্ষতিকর প্রভাব, ৬। জীববৈচিত্র্যে ক্ষতিকর প্রভাব, ৭। পরিবেশ দূষণ রোধে ব্যক্তিগত পদক্ষেপ, ৮। পরিবেশ দূষণ রোধে পারিবারিক পদক্ষেপ, ৯। পরিবেশ দূষণ রোধে সামাজিক পদক্ষেপ, ১০। পরিবেশ দূষণ রোধে সরকারি পদক্ষেপ, ১১। পরিবেশ দূষণ রোধে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা, ১২। পরিবেশ দূষণ রোধে গণমাধ্যমের ভূমিকা, ১৩। জ্বালানির বিকল্প ব্যবহার, ১৪। বনায়ন ও বৃক্ষরোপণ, ১৫। টেকসই উন্নয়ন, ১৬। আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, ১৭। দূষণের প্রতিক্রিয়া, ১৮। পরিবেশ দূষণের ফল, ১৯। প্রতিকার ও প্রতিরোধ, ২০। উপসংহার।

পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার রচনা

ভূমিকা

মানুষের চারপাশে যা কিছু আছে তাই নিয়ে তার পরিবেশ। পরিবেশের সাথে মিলেমিশে মানুষ বা অপরাপর প্রাণীর জীবনের বিকাশ ঘটে। তারা নিজ নিজ উপকরণ থেকেই প্রয়োজনীয় অংশ ব্যবহারের পর পরিত্যক্ত অংশ ফিরে যায় সেই পরিবেশে। সেখান থেকে তা আবার মানুষ গ্রহণ করে। এভাবে জীবজগৎ ও তার পরিবেশের মধ্যে বেঁচে থাকার উপকরণের আদান-প্রদান চলে । আদান-প্রদানের ভারসাম্যের উপর জীবের অস্তিত্ব নির্ভরশীল । এ ভারসাম্য বিঘ্নিত হলে তাকে বলা হয় পরিবেশ দূষণ । 

পরিবেশ দূষণের শুরু

মানব সভ্যতা বিকাশের সাথে সাথে পরিবেশ দূষণের শুরু। মানুষ শিখল আগুন জ্বালাতে, বন কেটে করল বসত। সেই সাথে সভ্যতার বিচিত্র বিকাশের প্রতিক্রিয়ায় পরিবেশ হতে থাকল দূষিত। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নে যাত্রা শুরু হলো নতুন যুগের, নতুন সভ্যতার শুরু হলো নগর জীবনের, গড়ে উঠল অসংখ্য কারখানা, যানবাহনের প্রাচুর্য দেখা দিল পথে পথে। সবুজ বিপ্লব ঘটাতে এলো কীটনাশক। আণবিক ও পারমাণবিক বোমার তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ল আকাশে- বাতাসে । ফলে পরিবেশ দূষণ দেখা দিল ব্যাপকভাবে।

আরো পড়ুন : ছাত্রজীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য রচনা ২০ পয়েন্ট

পরিবেশ দুষণের প্রকারভেদ

বাংলাদেশে পরিবেশ দূষণের মাত্রা দিন দিন বাড়ছে, যা আমাদের স্বাস্থ্য ও অর্থনীতির ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। এই দূষণ বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। যেমন, বায়ু, পানি, মাটি শব্দ ও তেজস্ক্রীয় দুষণ। শিল্প কারখানার বর্জ্য, পয়ঃনিষ্কাশনের নোংরা পানি, কৃষি জমিতে ব্যবহৃত কীটনাশক ও রাসায়নিক সার নদীর পানি ও ভূগর্ভস্থ পনিকে দূষিত করে। অতিরিক্ত মাত্রায় রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার, শিল্প কারখানার বর্জ্য এবং পলিথিনের যত্রতত্র ব্যবহার মাটিকে দূষিত করে। যানবাহনের হর্ন, নির্মাণ কাজের আওয়াজ, কলকারখানার শব্দ এবং উচ্চস্বরে গানবাজনা মানুষের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের ওপর বিরুপ প্রভাব ফেলে। যদিও বাংলাদেশে তেজস্ক্রিয় দূষণের মাত্রা তুলনামূলকভাবে কম, তবে এর ঝুঁকি সবসময় থেকেই যায়। অন্যদিকে, অতিরিক্ত কৃত্রিম আলো জীবজন্তুদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ব্যঘাত ঘটায় প্রতিদিন।

স্বাস্থ্যে ক্ষতিকর প্রভাব

পরিবেশ দূষণ বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্যের জন্য একটি মারাত্মক হুমকি স্বরুপ হয়ে গেছে। বায়ু, পানি ও মাটির দূষণের ফলে আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার মান বিষিয়ে তুলছে, ফলে সবচেয়ে ক্ষতিকর প্রভাব সৃষ্টি করছে আমাদের স্বাস্থ্যের উপর। বায়ু দূষণের ফলে শ্বাসকষ্ট, কাশি, হাঁপানি এবং ব্রংকাইটিসের মতো রোগ বেড়েই চলছে। বাতাসে ভাসমান ধূলিকণা ও বিষাক্ত গ্যাস শিশুদের ফুসফুসের কার্যকারিতা কমিয়ে আনছে এবং বয়স্কদের শ্বাসযন্ত্রের সমস্যাকে আরও জটিল করে তুলছে। সেই সাথে বায়ু দূষণের কারণে হৃদরোগের ঝুঁকিও ক্রমশ বাড়ছে। অন্যদিকে, দূষিত পানি পান করার ফলে ডায়রিয়া, কলেরা, টাইফয়েড এবং জন্ডিসের মতো পানিবাহিত রোগ মহামারী আকারে দেখা দিচ্ছে আমাদের দেশে। পানিতে আর্সেনিক দূষণের ফলে দেশের অনেক অঞ্চলের মানুষ দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে, যার মধ্যে চর্মরোগ ও ক্যান্সার অন্যতম।

অর্থনীতিতে ক্ষতিকর প্রভাব

পরিবেশ দূষণ শুধু আমাদের স্বাস্থ্য আর প্রকৃতির জন্যই ক্ষতিকর নয় বরং এর মারাত্মক প্রভাব আমাদের  অর্থনীতির ওপরও প্রবলভাবে আপতিত হচ্ছে। পরিবেশ দূষণের কারণে কৃষিক্ষেত্রে বড় ধরনের ক্ষতি সাধিত হচ্ছে। মাটি, পানি আর বায়ু দূষণের ফলে ফসলের উৎপাদন কমে যাচ্ছে। কীটনাশক আর রাসায়নিক সারের অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে জমির উর্বরতা হ্রাস পাচ্ছে ফলে দীর্ঘমেয়াদী খাদ্য নিরাপত্তাসহ বাংলাদেশের কৃষি মারাত্মক হুমকির মুখে পড়তছে। এছাড়াও পরিবেশ দুষণের ফলে কৃষিসহ অর্থনীতির আরোও অন্যান্য ক্ষেত্রগুলোতে যেমন, শিল্পকারখানা, পর্যটন, মৎস্য ইত্যাদি বিভিন্ন খাতে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে।

আরো পড়ুন : শ্রমের মর্যাদা রচনা ২০ পয়েন্ট সকল ক্লাসের

জীববৈচিত্র্যে ক্ষতিকর প্রভাব

বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত পরিবেশ দূষণ জীববৈচিত্র্যের জন্য এক ভয়াবহ বিপদ বয়ে আনছে। কলকারখানার বিষাক্ত বর্জ্য পদার্থ, কৃষিক্ষেত্রে ব্যবহৃত কীটনাশক এবং প্লাস্টিকের অবাধ ব্যবহার আমাদের নদী, খাল-বিল ও মাটিকে দূষিত করছে। এর ফলে জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদের জীবনচক্র মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। অনেক মাছ ও অন্যান্য জলজ জীব বা প্রাণী মরে যাচ্ছে, যা কেবল তাদের প্রজাতিকেই নয়, পুরো খাদ্যশৃঙ্খলকেও ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

পরিবেশ দূষণ রোধে ব্যক্তিগত পদক্ষেপ

পরিবেশ দূষণ রোধে আমাদের সকলের সচেতনতা ও সক্রিয় অংশগ্রহণ অত্যন্ত জরুরি। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ছোট ছোট বিভিন্ন পরিবর্তন এনে আমরা পরিবেশ রক্ষায় বড় ভূমিকা রাখতে পারি। অপ্রয়োজনে বিদ্যুৎ ও পানির ব্যবহার না করা, ব্যক্তিগত যানবাহন যথাসম্ভব এড়িয়ে চলে এর পরিবর্তে হাঁটার অভ্যাস গড়ে তোলা, সাইকেল চালানো বা গণপরিবহন ব্যবহার করে বায়ু দূষণ কমাতে সহযোগীতা করতে হবে। গাছ লাগানো এবং বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে অংশ নেওয়াও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।

পরিবেশ দূষণ রোধে পারিবারিক পদক্ষেপ

পরিবেশ দূষণ রোধে পারিবারিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে পরিবেশ দুষণ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। পরিবারের সকল সদস্যদের মাঝে পরিবেশবান্ধব অভ্যাস গড়ে তুলতে উৎসাহিত করা যেতে পারে। যেমন, পচনশীল ও অপচনশীল বর্জ্য আলাদা করা এবং বাড়ির আশেপাশে প্রচুর গাছ পালা রোপন করে পারিবারিকভাবে পরিবেশ দুষণ রোধে অংশগ্রহণ করা যেতে পারে।

পরিবেশ দূষণ রোধে সামাজিক পদক্ষেপ

পরিবেশ দূষণ রোধে সামাজিকভাবে আমরা কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারি। বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠন গড়ে তোলাসহ সেগুলোর সাথে যুক্ত হয়ে পরিবেশ রক্ষায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করা যেতে পারে। স্থানীয় পর্যায়ে পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা, বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি এবং পরিবেশ সচেতনতামূলক প্রচারাভিযান চালানো যেতে পারে। পরিবেশ দূষণ সৃষ্টিকারী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়াও পরিবেশ দূষণ রোধে সামাজিক দায়িত্ব।

আরো পড়ুন : অধ্যবসায় রচনা ২০ পয়েন্ট সহজ ভাষায়

পরিবেশ দূষণ রোধে সরকারি পদক্ষেপ

কঠোর পরিবেশ আইন প্রণয়ন ও তার সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করা পরিবেশ দূষণ রোধে প্রধান সরকারি পদক্ষেপ হতে পারে। শিল্প-কারখানার বর্জ্য পরিশোধনে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা, নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস ব্যবহারে প্রণোদনা দেওয়া এবং দূষণমুক্ত গণপরিবহন ব্যবস্থার প্রসার ঘটানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া, পরিবেশ শিক্ষা পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সচেতন করে তোলা সরকারের অন্যতম প্রধান কর্তব্য। এই সম্মিলিত প্রচেষ্টাই একটি দূষণমুক্ত ও টেকসই ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করা যেতে পারে।

পরিবেশ দূষণ রোধে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা

পরিবেশ দূষণ রোধে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ছোটবেলা থেকেই পরিবেশ সচেতনতা সৃষ্টি করতে পারে। পাঠ্য বইয়ে পরিবেশ বিজ্ঞান বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা, নিয়মিত সভা সেমিনার ও কর্মশালার আয়োজন করা জরুরী। সেই সাথে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি ও পরিচ্ছন্নতা অভিযানগুলোতে শিক্ষার্থীদের সক্রিয় ভূমিকা পালনের মাধ্যমে তাদের মধ্যে পরিবেশবান্ধব আচরণ সৃষ্টি করা সম্ভব। এছাড়া, বিদ্যালয় ও কলেজ ক্যাম্পাসে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সঠিক নিয়মকানুন শেখানো এবং তা নিয়মিত অনুশীলনের সুযোগ করে দেওয়া শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আশা করা যায়।

পরিবেশ দূষণ রোধে গণমাধ্যমের ভূমিকা

গণমাধ্যম পরিবেশ দূষণের ভয়াবহতা সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে অপরিহার্য ভূমিকা পাল করে। সংবাদপত্র, টেলিভিশন, রেডিও এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোতে পরিবেশ দূষণের কারণ, প্রভাব ও এর প্রতিকার নিয়ে তথ্যবহুল সংবাদ, প্রতিবেদন ও প্রামাণ্যচিত্র প্রকাশ করা ও উপস্থাপন করতে পারে। দূষণ সৃষ্টিকারী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে জনমত গঠনে এবং সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টিতে গণমাধ্যমের ভূমিকা অপরিহার্য। পরিবেশ রক্ষায় সফল ও সেরা উদ্যোগগুলো তুলে ধরে গণমাধ্যম কর্মি মহল মানুষকে অনুপ্রাণিত করতে পারে। নিয়মিতভাবে পরিবেশ বিষয়ক আলোচনা ও বিতর্ক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সাধারণ মানুষকে পরিবেশ রক্ষায় তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন করে তুলতে পারে।

জ্বালানির বিকল্প ব্যবহার

পরিবেশ দূষণ রোধে বিকল্প জ্বালানির ব্যবহার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আমরা জানি জীবাশ্ম জ্বালানি যেমন কয়লা, তেল ও গ্যাস পোড়ানোর ফলে বাতাসে প্রচুর পরিমাণে কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গত হয়, যা বায়ুমণ্ডলকে সহজেই দূষিত করে। আর এই প্রক্রিয়া জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। তাই এর পরিবর্তে সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি, জলবিদ্যুৎ এবং বায়োগ্যাস হতে পারে নবায়নযোগ্য ও পরিবেশবান্ধব জ্বালানির অন্যমত মাধ্যম। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে এই বিকল্প জ্বালানিগুলোর গবেষণা ও প্রসার করতে এই খাতে বিনিয়োগ করা জরুরি। সর্বপরি জ্বালানির বিকল্প ব্যবহার বাড়িয়ে পরিবেশে কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে এটাতে সুস্থ রাখতে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।

বনায়ন ও বৃক্ষরোপণ

বনায়ন ও বৃক্ষরোপণ হতে পারে পরিবেশ দূষণ রোধে একটি সঠিক ও প্রাকৃতিক সমাধান। আমরা জানি, গাছপালা বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে অক্সিজেন ত্যাগ করে, যা বায়ুর গুণগতমান ঠিক রাখে। প্রতিনিয়ত নির্বিচারে বন উজাড় করার ফলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে এবং জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ছে। তাই পরিবেশ দুষণ ঠেকাতে ব্যাপক হারে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি গ্রহণ করা এবং বিদ্যমান বনভূমি সংরক্ষণ করা অপরিহার্য। ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক এবং সরকারি পর্যায়ে বনায়ন ও বৃক্ষরোপণকে একটি জাতীয় কর্মসূচিতে পরিণত করে পরিবেশ দুষণরোধ করা সম্ভব।

টেকসই উন্নয়ন

টেকসই উন্নয়ন পরিবেশ দূষণ রোধে একটি দীর্ঘমেয়াদী উপায়। আসলে এর অর্থ হলো কোন কিছুর এমনভাবে উন্নয়ন করা, যা বর্তমান প্রজন্মের চাহিদাও পূরণ করবে আবার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের চাহিদাও পূরণের সক্ষমতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে না। ফলে টেকসই উন্নয়নের মাধ্যমে আমরা পরিবেশ দুষণ রোধ করতে পারি। পরিবেশ সুরক্ষার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য এটি বেশ কার্যকর। টেকসই কৃষিব্যবস্থা, পরিবেশবান্ধব শিল্পায়ন, বর্জ্য হ্রাস ও পুনর্ব্যবহার টেকসই উন্নয়নের মূল ভিত্তি।

আন্তর্জাতিক সহযোগিতা

আন্তর্জাতিক সহযোগিতা পরিবেশ দূষণ মোকাবিলায় অপরিহার্য। পরিবেশ দূষণ কোনো একটি দেশের সমস্যা নয় বরং এটি একটি বৈশ্বিক সংকট। তাই বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার মধ্যে তথ্য আদান-প্রদান, প্রযুক্তি হস্তান্তর এবং যৌথভাবে পরিবেশ দূষণ রোধে কাজ করা প্রয়োজন। জলবায়ু পরিবর্তন, সীমান্ত অতিক্রমকারী দূষণ এবং জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে আন্তর্জাতিক চুক্তি ও প্রোটোকলগুলো মেনে চলা এবং কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। এই সম্মিলিত বৈশ্বিক প্রচেষ্টা ছাড়া পরিবেশ দূষণকে কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়।

আরো পড়ুন : ২১ শে ফেব্রুয়ারি রচনা : আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস রচনা

দূষণের প্রতিক্রিয়া

মানুষ যেসব জিনিস ব্যবহার করে সেগুলোর পরিত্যক্ত বিষাক্ত পদার্থই দূষণের সৃষ্টি করে। বাতাস, পানি ও শব্দ- এ তিন শ্রেণিতে দূষণকে ভাগ করা চলে। বাতাসে জীবনের অস্তিত্বের ক্ষতিকর পদার্থের মাত্রা বেশি হলে তাকে বলে বায়ুদূষণ। ধোয়া, ধুলা- বালি, কীটনাশক, তেজস্ক্রিয় পদার্থ প্রভৃতি বায়ুদূষণের প্রধান কারণ। তেলের দহনজাত ধোঁয়া থেকে সালফার ডাই-অক্সাইড, যানবাহনের ধোঁয়া থেকে বেঞ্জাপাইরিন-হাঁপানি ও ফুসফুস রোগের কারণ । ধূলাবালি ঘরবাড়ি নষ্ট করে এবং এটি রোগবাহক। কীটনাশক হরমোনের ভারসাম্য বিনষ্ট করে। আণবিক ও পারমাণবিক তেজস্ক্রিয় পদার্থ ক্যান্সার রোগের কারণ । তা থেকে অঙ্গবিকৃতিও হতে পারে। 

পরিবেশ দূষণের ফল

পরিবেশ দূষণের জন্য ঝড়, বন্যা, খরা, অনাবৃষ্টি প্রভৃতি হচ্ছে। গাছপালার সঙ্গে 'বৃষ্টির প্রাকৃতিক যোগসূত্র রয়েছে। কাজেই গাছপালা কমে আসার সঙ্গে সঙ্গে বৃষ্টিপাত কমে এসেছে, খরা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে ফসল পুড়ে যাচ্ছে। ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে, দেখা দিচ্ছে খাদ্যাভাব। পানির স্তর ধীরে ধীরে নিচে চলে যাচ্ছে। মাটি রসহীন হয়ে পড়ছে। পানীয় জলের অভাব ঘটছে। প্রকৃতির মধ্যে বিপর্যয় নেমে আসছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে জীবজন্তু ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে। 

প্রতিকার ও প্রতিরোধ 

পরিবেশ দূষণে মানুষের স্বাস্থ্যহানি, রোগ-শোক, অর্থ ও সম্পদের অপচয় ইত্যাদি যেসব ক্ষতি সাধিত হয় সেগুলো থেকে মানুষকে অবশ্যই রক্ষা করতে হবে। প্রকৃতির মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার পথ বের করতে হবে। এর জন্য নানা পদ্ধতি প্রয়োগ করা যেতে পারে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বৈজ্ঞানিকরা আজ সারা বিশ্বের মানুষকে এ পরিবেশ দূষণ সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। পরিবেশ দূষণের ফলে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছিল তার প্রেক্ষিতে দূষণ রোধ করার প্রচেষ্টা চলে। বিভিন্ন দেশে দূষণ নিরোধন আইন হয়েছে। বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে দূষণ বন্ধ করার চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে। আন্তর্জাতিকভাবে এর মোকাবিলার উদ্যোগও গ্রহণ করা হয়েছে। প্রতিবছর ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালন করা হয়। আমাদের দেশেও এ ব্যাপারে সচেতনতার সৃষ্টি হচ্ছে।

উপসংহার

পরিবেশ দূষণ মানবজাতির জন্য এক মারাত্মক হুমকি। এ ব্যাপারে সারা বিশ্বের মানুষের সচেতনতা দরকার। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে এ সমস্যা আরও প্রকট। জাতির স্বার্থেই তার মোকাবিলা প্রয়োজন। পরিবেশ দূষণ একটি জটিল সমস্যা, যার সমাধানে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। সচেতনতা বৃদ্ধি এবং কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমেই একটি সুস্থ ও সুন্দর ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করা সম্ভব।

শেষ কথা : পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার রচনা

প্রিয় পাঠক, নিশ্চই আপনি পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার রচনা টি শেষ পর্যন্ত পড়েছেন। পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার রচনা ২০ পয়েন্ট ক্লাস 5 6 7 8 9 10 এসএসসি (ssc), এইচএসসি (hsc) শিক্ষার্থীদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলা ২য় পত্র পরীক্ষায় ভাল মার্কস পেতে অবশ্যই ২০ পয়েন্ট বা ২৫ পয়েন্টের উপর প্রবন্ধ রচনা লিখতে হয়। পরীক্ষায় ভাল মার্কস পেতে মান সম্পন্ন লেখাও জরুরী। আশা করি উপরের রচনাটি সকল ক্লাসের শিক্ষার্থীদের জন্য উপযুক্ত হবে। রচনটি ভাল লাগলে বন্ধুদের সাথে সেয়ার করুন কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্টে জানিয়ে দিবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ফ্লোনেস্ট বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url