২০ কেজি ওজন কমানোর ৭টি উপায়

২০ কেজি ওজন কমানোর ৭টি উপায় জানতে চান? বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত ঘরোয়া ও প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে দ্রুত ওজন কমানো, পেশী রক্ষা করা ও সুস্থ জীবন উপভোগ করুন।

২০ কেজি ওজন কমানোর ৭টি উপায়
পোস্ট সূচিপত্র

২০ কেজি ওজন কমানোর ৭টি উপায়

বর্তমানে আমাদের জীবনধারায় প্রতিনিয়ত অনিয়ম ও খাদ্যাভ্যাসের কারণে অনেকেই অতিরিক্ত ওজন ও মোটা হওয়া সমস্যায় ভুগছেন। আর এদের মধ্যে অধিকাংশ মানুষই হঠাৎ করে সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয় যে, এবার ২০ কেজি ওজন কমাতেই হবে। আর এটা করতে কিছু সমস্যা সৃষ্টি হয়, সেই সাথে আমরা সবাই দ্রুত এর ফলাফল আশা করি। কিন্তু স্বাস্থ্যকর ও নিরাপদভাবে ওজন কমানোর জন্য প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা, ব্যবস্থাপনা, ধৈর্য, সুনির্দিষ্ট খাদ্যাভ্যাস, শরীরচর্চা বা ব্যায়াম ও যথাযথ মানসিক প্রস্তুতি।

এই পোস্টে আমরা আলোচনা করবো বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত ৭টি উপায়, যেগুলো ধাপে ধাপে অনুসরণ করলে নিরাপদ এবং স্থায়ীভাবে আপনার শরীরের অতিরিক্ত চর্বি ঝরাতে সহায়ক হবে।

আরো পড়ুন : বুকের দুধ বৃদ্ধির ঘরোয়া ও প্রকৃতিক উপায়

১. ক্যালরি ঘাটতি তৈরি করা ও দ্রুত ওজন কমানোর উপায়

এ সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা ক্যালরি ডেফিসিট (Calorie Deficit) প্রকৃয়া অবলম্বন করতে বলেন। ক্যালরি ডেফিসিট হলো আপনি যত ক্যালরি গ্রহণ করবেন তার থেকে বেশি পোড়ানো বা বার্ন করা। অর্থাৎ প্রতিদিন যত ক্যালোরি খাবেন তার হিসাব করে শারীরিক কার্যক্রম বাড়িয়ে তার চেয়ে বেশি ক্যালরি ঝড়িয়ে ফেলতে হবে। তাহলে শরীর তার চাহিদা পূরণের জন্য জমে থাকা ফ্যাট বার্ন করতে শুরু করবে। ফলে দ্রুত ওজন কমার সম্ভাবনা বাড়বে।

এ ক্ষেত্রে কার্যকরী কৌশল হলো, প্রতিদিন আপনার শরীরে ৫০০–৭৫০ ক্যালোরির ঘাটতি তৈরি তৈরী করতে হবে। প্রক্রিয়াজাত খাবার, সাদা চাল, চিনি এগুলো খাওয়া কমাতে হবে পারলে বাদ দিতে হবে। আর আপনার খাবার ট্র্যাক করার জন্য প্লে-স্টোরে অনেকগুলো মোবাইল অ্যাপ পাওয়া যায়। সুুবিধামত এর যেকোন একটি অ্যাপস ব্যবহার করতে পারেন। চর্বিহীন প্রোটিন ও ফাইবার-সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার অভ্যাস তৈরী করুন।

একটি ক্লিনিক্যাল গবেষণায় দেখা গেছে, যারা ক্যালরি ঘাটতির নিয়ম বা Calorie Deficit মেনে চলেছে তারা ১২ সপ্তাহে গড়ে ৮–১২ কেজি ওজন কমাতে সক্ষম হয়েছে।

২. ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং শুরু করুন : ৭ দিনে ওজন কমানোর উপায়

‍"৭ দিনে ওজন কমানো" শব্দটি শুনলে অনেকেই অবাক হয়ে যায়। তবে মাত্র ১ সপ্তাহে যদি আপনি ২০ কেজি ওজন কমানোর চেষ্টা করেন তবে এটি কিন্তু কোনমতেই স্বাস্থ্যকর হবে না। তবে আপনি যদি এখনই Intermittent Fasting শুরু করেন, তাহলে প্রাথমিকভাবে পানি ও ফ্যাট থেকে ২–৪ কেজি ওজন কমে যেতে পারে।

৭ দিনে ওজন কমানোর উপায়

ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং এর জনপ্রিয় তিনটি ধরন রয়েছে। ক) ১৬:৮ পদ্ধতি, খ) ৫:২ পদ্ধতি ও গ) OMAD (One Meal a Day)। 

ক) ১৬:৮ পদ্ধতি হলো রাত দিন ২৪ ঘন্টার মধ্যে ১৬ ঘন্টা না খেয়ে থাকতে হবে আর বাকি ৮ ঘন্টা খাওয়া।

খ) ৫:২ পদ্ধতি হলো, এক সপ্তাহের নিদ্দিষ্ট ২ দিন ৫০০ ক্যালোরির কম গ্রহণ করতে হবে।

গ) OMAD (One Meal a Day) পদ্ধতি হলো, পুরো দিনে নিদ্দিষ্ট একটা সময় একবার খাবার খাওয়া।

ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং এর বৈজ্ঞানিক ভিত্তি অনেক শক্তিশালি, একটি গবেষণায় বলা হয়, ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং ইনসুলিন সেন্সিটিভিটি বাড়াতে পারে, লিপিড প্রোফাইল ভাল রাখে এবং ফ্যাট বার্নিং প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্য করে।

আরো পড়ুন : জন্ম নিয়ন্ত্র বড়ি খাবার নিয়ম

৩. ওজন কমানোর ব্যায়াম: ফ্যাট বার্নিং ও মেটাবলিজম বাড়ানো

দ্রুত ওজন কমানোর জন্য শুধুমাত্র ডায়েট যথেষ্ট নয়। পরিমিত ব্যায়াম করলে আপনি আরও বেশি ক্যালোরি বার্ন করতে পারবেন এবং পেশি রক্ষা করতে পারবেন যা ওজন কমানোর সময়টাতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিম্নে কার্যকরী কিছু ব্যায়ামের ধরন তুলে ধরা হলো-

কার্ডিও: দৌড়ানো, হাঁটা, সাইক্লিং ও জাম্পিং জ্যাক ওজন কমাতে সহায়ক হবে।

HIIT Workout: High-Intensity Interval Training এটি ক্যালরি বার্ন করতে অত্যান্ত সহায়ক। এটি প্রতি ২০ মিনিটে ৩০০ ক্যালোরি বার্ন করে।

স্ট্রেংথ ট্রেনিং (Strength Training): এটি পেশি বাড়ায় ও ফ্যাট বার্ন ত্বরান্বিত করে।

যোগ ব্যায়াম: নিয়মিত যোগ ব্যায়াম হতে পারে আপনার ওজন কমানোর আরেকটি অন্যতম মাধ্যম। এটি মানসিক চাপ কমায় ও শরীর সুস্থ রাখতে সহায়ক।

HIIT ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে শরীর ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অতিরিক্ত ক্যালোরি বার্ন করতে থাকে। একটি Harvard study তে বলা হয়েছে, কেউ যদি সপ্তাহে ৫ দিন ৩০ মিনিটের কার্ডিও করে তাহলে ১২ সপ্তাহে গড়ে ৬ থেকে ৭ কেজি ওজন কমাতে স্বক্ষম হবে।

ওজন কমানোর ব্যায়াম

৪. ওজন কমানোর ঘরোয়া উপায়: প্রাকৃতিক উপাদানে সহজ সমাধান

ব্যায়াম ও ডায়েটের পাশাপাশি কিছু ঘরোয়া উপায় শরীরের ওজন কমাতে সাহায্য করে। আর এই ঘরোয়া উপাদানগুলোর বেশিরভাগই আমাদের রান্নাঘরেই পাওয়া যায়। নিম্নে কিছু কার্যকরী ঘরোয়া উপায় তুলে ধরা হলো।

ক) প্রতিদিন সকালে খালি পেটে আদা ও লেবুর পানি পান করলে মেটাবলিজম বাড়ে ফলে ওজন কমায়।

খ) গ্রিন টি: গ্রিন টি বা সবুজ চা দেহের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফ্যাট ঝড়াতে স্বক্ষম, তাই যাদের চা খাওয়ার অভ্যাস আছে তারা সকালে ও রাতে গ্রিন টি খেতে পারেন। 

খ) রাতে ১০ গ্রাম মেথি এক গ্লাস পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটে পান করতে পারেন। এটা দেহের ইনসুলিন নিয়ন্ত্রণে খুবই সহায়ক। 

ঘ) সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা ওজন কমানোর আরেকটি মাধ্যম। প্রতিদিন ১০ মিনিট সিঁড়ি দিয়ে ওঠা নামা করলে ক্যালোরি বার্ন হবে এবং ওজন কমবে। রাতে খাবার ১ ঘন্টা পর ১০-১৫ মিনিট সিঁড়ি দিয়ে ওঠা নামা করলে ভাল ফল পাবেন।

আরো পড়ুন : মহিলাদের সুতিকা রোগের ঔষধ

৫. ওজন কমানোর সহজ উপায়: প্রোটিন ও ফাইবার-সমৃদ্ধ খাদ্যাভ্যাস

ওজন কমানোর আরেকটি সহজ ও কার্যকর একটি উপায় হলো, প্রোটিন ও ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া। এটি ক্ষুধা কমায়, ধীরে ধীরে হজম প্রক্রিয়া চালায় ফলে ক্ষুধা কম লাগে এবং দীর্ঘ সময় পেট ভরা অনুভূত হয়। তাই অতিরিক্ত খাবার খাওয়া কমে যায় এবং ওজন দ্রুত কমে যায়। ডিম, মুরগির মাংস, মাছ, দুধ, দই, বাদাম, মসুর ডাল, ছোলা ইত্যাদি প্রোটিনের উৎস হিসেবে কাজ করে। আবার ওটস, ব্রাউন রাইস, শাকসবজি, ফল, লাল আটার রুটি ও দানাদার শস্যতে প্রচুর ফাইবার রয়েছে। একটি ব্রিটিশ স্টাডিতে জানা গেছে, প্রোটিন ও ফাইবার মিলে প্রতিদিন মানব দেহে ৩০% পর্যন্ত ক্ষুধা কমাতে পারে।

৬. মানসিক চাপ ও ঘুম নিয়ন্ত্রণ: কর্টিসল হরমোনের প্রভাব

মূলত কর্টিসল হলো স্ট্রেস হরমোন। এটি বেড়ে গেলে শরীরে চর্বি জমাতে থাকে এবং অস্বাভাবিক ক্ষুধা লাগে। মানসিক চাপ বা স্ট্রেস ও ঘুমের সমস্যা থাকলে কখনই ওজন কমানো সম্ভব হবে না। তাই কর্টিসল হরমন ঠিক রাখতে পরিমিত ঘুমের প্রয়োজন। তাই প্রতিদিন অন্তত ৭–৮ ঘণ্টা ঘুমাতে হবে এবং ঘুমের আগে মোবাইল ফোন ব্যবহার করা যাবে না। সেই সাথে স্ট্রেস থাকলে সেটিও কমাতে হবে। প্রকৃতির মাঝে হাঁটা, গান শোনা, বই পড়া স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে সেই সাথে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার কমাতে হবে, প্রয়োজন হলে কাউন্সেলিং করতে হবে। National Sleep Foundation এর মতে, ঘুমের অভাব মেটাবলিজম প্রকৃয়াকে ধীর করে এবং ফ্যাট বার্ন বন্ধ করে দেয়।

৭. পানি পান ও পর্যবেক্ষণ: ট্র্যাকিংয়ের অভ্যাস তৈরী করুন

পানি কিন্তু ওজন কমাতে সহায়তা করে কারণ এটি ক্ষুধা কমায়। আপনার ওজন অনুযায়ী পর্যাপ্ত পানি পান করুন। পর্যাপ্ত পানি পান করলে এটি পেট ভরা রাখবে এবং হজম প্রকৃয়াও ভাল করে। যারা দ্রুত ওজন কমাতে চান, তারা প্রত্যেকবার খাওয়ার আগে পানি পান করা উচিৎ ফলে আপনি অতিরিক্ত খাবার খেতে পারবেন না। পুরো দিন পানি পান করা ট্র্যাকিং করুন। প্রয়োজনে বোতলের গায়ে দাগ দিয়ে রাখুন কখন কতটুকু পানি পান করবেন। তাহলে সহজে ওজন কমতে শুরু করবে।

FAQ : ২০ কেজি ওজন কমানোর ৭টি উপায়

প্রশ্ন: আমি কি এক মাসে ২০ কেজি ওজন কমাতে পারি?

উত্তর: না, এটি স্বাস্থ্যসম্মত নয়। এক মাসে ৪–৫ কেজির বেশি কমানো একদম উচিত নয়।

প্রশ্ন: ব্যায়াম না করে শুধু ডায়েট করলে কি ওজন কমবে?

উত্তর: শুরুর দিকে কমলেও, শুধু ডায়েট করে দীর্ঘমেয়াদী ওজন কমানো একটু কষ্টকর হবে।

প্রশ্ন: গ্রিন টি দিনে কয়বার খাব?

উত্তর: দিনে ২–৩ বার গ্রিন টি খাওয়া যায়, তবে খালি পেটে না খাওয়াই ভালো।

প্রশ্ন: স্ট্রেস কি ওজন বাড়ায়?

উত্তর: হ্যা, স্ট্রেস শরীরে কর্টিসল হরমোন বাড়িয়ে দেয়, চর্বি জমাতে শুরু করে ফলে ওজন বাড়ায়।

উপসংহার : ২০ কেজি ওজন কমানোর ৭টি উপায়

প্রিয় পাঠক, ২০ কেজি ওজন কমানোর ৭টি উপায় সম্পর্কিত এই পোস্টটি পড়ে আপনি গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য পেয়েছেন বলে আশা রাখছি। ২০ কেজি ওজন কমানো একটি দীর্ঘমেয়াদী সম্ভাবনা। তবে এটি যে একেবারেই অসম্ভব তা কিন্তু নয়। ক্যালরি ঘাটতি তৈরি, ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং, ব্যায়াম, ঘরোয়া উপায়, প্রোটিন ও ফাইবার যুক্ত খাবার গ্রহন, পরিমিত ঘুম এবং পর্যাপ্ত পানি পান করা। সবকিছু মিলিয়ে আপনার ওজন কমানো একটি সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করতে পারবে বলে আশা রাভি। পোস্টটি কেমন লাগলো? ভাল লাগলে বন্ধুদের সাথে সেয়ার করুন কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করতে ভুলবেন না।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ফ্লোনেস্ট বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url