জলবায়ু পরিবর্তন ও বাংলাদেশ রচনা ২০ পয়েন্ট
জলবায়ু পরিবর্তন ও বাংলাদেশ রচনা ২০ বা তার বেশি পয়েন্ট খুঁজছেন? বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক উষ্ণায়ন সম্পর্কে তথ্যবহুল এই রচনাটি আপনার জন্য।
পোস্ট সূচিপত্রজলবায়ু পরিবর্তন ও বাংলাদেশ রচনা ২০ পয়েন্ট
বাংলাদেশে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের জন্য জলবায়ু পরিবর্তন ও বাংলাদেশ রচনা ২০ পয়েন্ট, ২৫ পয়েন্ট ও ৩০ পয়েন্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে class 6, 7, 8, 9, 10 ও ssc পরীক্ষার্থীগণ এই রচনাটি খুঁজে থাকেন। আমাদের আজকেই এই পোস্টে বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তন ও বাংলাদেশ বিষয়ে রচনা নিয়ে হাজির হলাম। রচনাটি জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক উষ্ণায়ন রচনা হিসেবেও ব্যবহার করা যাবে। মাধ্যমিক স্থরের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি এটি উচ্চ মাধ্যমিক স্থরের বা hsc ছাত্র-ছাত্রীদের জন্যও খুব গুরুত্বপুর্ণ। রচনাটি খুবই সুন্দর ও সহজ ভাষায় অনেক তথ্যবহুল করে প্রস্তুত করা হয়েছে যা ssc ও hsc পরীক্ষার্থী সহ মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক সকল ক্লাসের ছাত্র-ছাত্রীরা নির্বিঘ্নে ব্যবহার করতে পারবে। তাই আর কথা নয় চলুন তাহলে দেখে নেয়া যাক জলবায়ু পরিবর্তন ও বাংলাদেশ রচনাটি।
আরো পড়ুন : পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার রচনা
পয়েন্টসমুহ : জলবায়ু পরিবর্তন ও বাংলাদেশ রচনা ২০ পয়েন্ট
১. ভূমিকা, ২. আবহাওয়া এবং জলবায়ুর পার্থক্য, ৩. জলবায়ু পরিবর্তন আসলে কী?, ৪. বৈশ্বিক উষ্ণায়ন: পৃথিবীর জ্বর, ৫. গ্রিনহাউস গ্যাস, ৬. কোথা থেকে আসে এই গ্রিনহাউস গ্যাস?, ৭. ওজোন স্তর: পৃথিবীর সুরক্ষাকবচ, ৮. বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান ও ঝুঁকি, ৯. সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি ও ভূমির বিলুপ্তি, ১০. কৃষিতে লবণাক্ততার মরণ ছোবল, ১১. বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের ভয়াল রূপ, ১২. তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও মরুকরণের হাতছানি, ১৩. নতুন দুর্যোগ বজ্রপাত, ১৪. জীববৈচিত্র্য ও সুন্দরবনের সংকট, ১৫. স্বাস্থ্য ঝুঁকি ও রোগের প্রাদুর্ভাব, ১৬. বাস্তুচ্যুতি ও জলবায়ু শরণার্থী, ১৭. বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ, ১৮. আন্তর্জাতিক উদ্যোগ ও বাংলাদেশ, ১৯. জলবায়ু পরিবর্তনে ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকা, ২০. উপসংহার।
জলবায়ু পরিবর্তন ও বাংলাদেশ রচনা ২০ পয়েন্ট
জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক উষ্ণায়ন রচনা
বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তন ও বাংলাদেশ রচনা
১. ভূমিকা
আমাদের পৃথিবী আজ এক বিরাট সংকটের মুখোমুখি, যার নাম জলবায়ু পরিবর্তন। তোমরা হয়তো দাদা-দাদি বা নানা-নানির কাছে শুনে থাকবে, তাদের ছোটবেলায় ঋতুগুলো ঠিক সময়ে আসত, আবহাওয়া এত খামখেয়ালি ছিল না। কিন্তু এখন আমরা দেখছি, যখন গরম পড়ার কথা তখন বৃষ্টি হচ্ছে, আবার শীতকালে তেমন শীত অনুভূত হচ্ছে না। পৃথিবীর আবহাওয়া ও জলবায়ুর এই যে অস্বাভাবিক পরিবর্তন, এটাই আমাদের আজকের আলোচনার মূল বিষয়। এই পরিবর্তন কোনো একটি দেশের সমস্যা নয়, বরং এটি একটি বৈশ্বিক সংকট, যা আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করেছে। আমাদের বেঁচে থাকার জন্য, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর পৃথিবী রেখে যাওয়ার জন্য এই বিষয়টি বোঝা এবং এর প্রতিকারে কাজ করা অত্যন্ত জরুরি।
২. আবহাওয়া এবং জলবায়ুর পার্থক্য
আমরা প্রায়ই আবহাওয়া এবং জলবায়ু শব্দ দুটিকে এক করে ফেলি, কিন্তু এদের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। আবহাওয়া হলো কোনো একটি নির্দিষ্ট স্থানের অল্প সময়ের বায়ুমণ্ডলীয় অবস্থা । যেমন, আজকের ঢাকার আবহাওয়া রৌদ্রোজ্জ্বল, আবার কাল হয়তো বৃষ্টি হতে পারে। এটি প্রতিদিন বা প্রতি ঘণ্টায় পরিবর্তন হতে পারে। অন্যদিকে, জলবায়ু হলো কোনো অঞ্চলের ৩০-৪০ বছরের আবহাওয়ার গড় অবস্থা। যেমন, বাংলাদেশের জলবায়ু নাতিশীতোষ্ণ, অর্থাৎ এখানে খুব বেশি গরম বা খুব বেশি ঠান্ডা পড়ে না। জলবায়ু পরিবর্তন বলতে এই দীর্ঘমেয়াদী অবস্থার অস্বাভাবিক ও স্থায়ী পরিবর্তনকে বোঝায়, যা ধীরে ধীরে সংঘটিত হয় এবং এর প্রভাব হয় সুদূরপ্রসারী ।
৩. জলবায়ু পরিবর্তন আসলে কী?
জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত প্যানেল (IPCC)-এর মতে, জলবায়ু পরিবর্তন হলো কোনো স্থানের জলবায়ুর দীর্ঘমেয়াদী এবং পরিসংখ্যানগতভাবে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন । সহজ কথায়, যখন কোনো অঞ্চলের আবহাওয়ার গড় অবস্থা, যেমন গড় তাপমাত্রা বা গড় বৃষ্টিপাত, কয়েক দশক বা তারও বেশি সময় ধরে বদলে যেতে থাকে, তখন তাকে জলবায়ু পরিবর্তন বলে। এই পরিবর্তনটি স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক দ্রুত ঘটছে এবং এর প্রধান কারণ হলো মানুষের কর্মকাণ্ড। এর ফলে ঋতুচক্রের পরিবর্তন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের সংখ্যা বৃদ্ধি, এবং পৃথিবীর সামগ্রিক পরিবেশে মারাত্মক ভারসাম্যহীনতা দেখা দিচ্ছে, যা মানুষসহ সকল জীবের অস্তিত্বকে হুমকির মুখে ফেলছে।
আরো পড়ুন : সময়ানুবর্তিতা রচনা
৪. বৈশ্বিক উষ্ণায়ন: পৃথিবীর জ্বর
জলবায়ু পরিবর্তনের পেছনের মূল কারণ হলো বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বা গ্লোবাল ওয়ার্মিং। তোমরা নিশ্চয়ই জানো, জ্বর হলে আমাদের শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। ঠিক তেমনি, বিভিন্ন কারণে পৃথিবীর পৃষ্ঠের গড় তাপমাত্রা ধীরে ধীরে বেড়ে চলেছে, আর একেই বলা হয় বৈশ্বিক উষ্ণায়ন । গত এক শতাব্দীতে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা প্রায় ০.৭৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে গেছে । শুনতে অল্প মনে হলেও, এই সামান্য তাপমাত্রা বৃদ্ধিই পৃথিবীর জলবায়ুর ভারসাম্য নষ্ট করার জন্য যথেষ্ট। এর ফলে মেরু অঞ্চলের বরফ গলে যাচ্ছে, সমুদ্রের পানির উচ্চতা বাড়ছে এবং আবহাওয়া হয়ে উঠছে আরও ভয়ংকর ও অনির্দেশ্য।
৫. গ্রিনহাউস গ্যাস
বৈশ্বিক উষ্ণায়নের জন্য দায়ী কিছু গ্যাসকে একত্রে গ্রিনহাউস গ্যাস বলা হয়। শীতের দেশে উদ্ভিদকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য কাচের ঘর বা গ্রিনহাউস তৈরি করা হয়, যা ভেতরের উষ্ণতা ধরে রাখে। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে থাকা কার্বন ডাইঅক্সাইড (CO2), মিথেন (CH4), এবং নাইট্রাস অক্সাইড (N2O) ঠিক একই কাজ করে । এরা সূর্যের তাপ পৃথিবীতে আসতে দেয়, কিন্তু সেই তাপকে পুরোপুরি ফিরে যেতে দেয় না, অনেকটা কাঁথা বা চাদরের মতো উষ্ণতা আটকে রাখে। এই গ্যাসগুলো পৃথিবীতে প্রাণধারণের জন্য প্রয়োজনীয়, কিন্তু শিল্পবিপ্লবের পর থেকে মানুষের কর্মকাণ্ডের ফলে এদের পরিমাণ এত বেড়ে গেছে যে, পৃথিবী প্রয়োজনের চেয়ে বেশি উত্তপ্ত হয়ে উঠছে।
৬. কোথা থেকে আসে এই গ্রিনহাউস গ্যাস?
গ্রিনহাউস গ্যাসগুলো প্রাকৃতিক এবং মনুষ্যসৃষ্ট উভয় উৎস থেকেই তৈরি হয়। তবে বর্তমানে বায়ুমণ্ডলে এর বৃদ্ধির প্রধান কারণ মানুষের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড। জীবাশ্ম জ্বালানি, যেমন—কয়লা, তেল ও গ্যাস পোড়ানো হলো কার্বন ডাইঅক্সাইড (CO2) বৃদ্ধির প্রধান কারণ । কলকারখানা, যানবাহন এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র থেকে প্রচুর পরিমাণে এই গ্যাস নির্গত হয়। একইভাবে, কৃষিকাজ, আবর্জনা পচা এবং গবাদিপশুর খামার থেকে মিথেন (CH4) গ্যাস উৎপন্ন হয় । এছাড়াও, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, বনভূমি ধ্বংস করা এবং রাসায়নিক সারের ব্যবহারও গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ বাড়িয়ে তুলছে।
৭. ওজোন স্তর: পৃথিবীর সুরক্ষা কবচ
ওজোন স্তরকে পৃথিবীর সুরক্ষাকবচ বলা হয়। আমাদের বায়ুমণ্ডলের উপরে ওজোন গ্যাসের একটি স্তর আছে, যা ছাতার মতো পৃথিবীকে সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মি থেকে রক্ষা করে । কিন্তু মানুষের তৈরি ক্লোরোফ্লুরোকার্বন বা CFC গ্যাসের কারণে এই সুরক্ষাকবচ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। রেফ্রিজারেটর, এয়ার কন্ডিশনার এবং বিভিন্ন স্প্রে থেকে নির্গত CFC গ্যাস ওজোন স্তরকে ক্ষয় করে দিচ্ছে । এর ফলে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি সরাসরি পৃথিবীতে চলে আসছে, যা কেবল জলবায়ুর পরিবর্তনই ঘটাচ্ছে না, বরং মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর ত্বকের ক্যান্সারসহ বিভিন্ন রোগের ঝুঁকিও বাড়িয়ে তুলছে। ওজোন স্তরের এই ক্ষয় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রক্রিয়াকে আরও ত্বরান্বিত করছে।
আরো পড়ুন : ছাত্রজীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য রচনা ২০ পয়েন্ট
৮. বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান ও ঝুঁকি
ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ একটি দেশ । আমাদের দেশ একটি বৃহৎ ব-দ্বীপ অঞ্চল, যার বেশিরভাগ এলাকাই সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে খুব বেশি উঁচু নয় । পদ্মা, মেঘনা, যমুনার মতো বড় বড় নদী জালের মতো ছড়িয়ে আছে সারাদেশে। এই বিশেষ ভৌগোলিক গঠনের কারণেই সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, নদীভাঙনের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে আমরা খুব সহজে আক্রান্ত হই। একদিকে হিমালয়ের বরফগলা পানির চাপ, অন্যদিকে বঙ্গোপসাগরের creciente পানির উচ্চতা—এই দুইয়ের মাঝে পড়ে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের এক নির্মম শিকার হতে চলেছে।
৯. সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি ও ভূমির বিলুপ্তি
বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে মেরু অঞ্চলের বরফ এবং পর্বতের হিমবাহ দ্রুত গলে যাচ্ছে, যার ফলে সমুদ্রের পানির স্তর উঁচু হচ্ছে। IPCC-এর তথ্যমতে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা মাত্র ১ মিটার বাড়লেই বাংলাদেশের প্রায় ১৭ হাজার বর্গ কিলোমিটার উপকূলীয় অঞ্চল পানির নিচে তলিয়ে যেতে পারে । এর ফলে দেশের প্রায় ১৫ মিলিয়ন বা দেড় কোটি মানুষ তাদের ঘরবাড়ি ও জমি হারিয়ে জলবায়ু শরণার্থীতে পরিণত হবে । দেশের দক্ষিণাঞ্চলের একটি বিশাল অংশ মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। এমনকি বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিতে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশকে দশম অবস্থানে দেখানো হয়েছে।
১০. কৃষিতে লবণাক্ততার মরণ ছোবল
সমুদ্রের পানির উচ্চতা বাড়ার কারণে দক্ষিণাঞ্চলের নদী ও ভূগর্ভস্থ পানিতে লবণাক্ত পানি প্রবেশ করছে। এর ফলে উপকূলীয় অঞ্চলের হাজার হাজার হেক্টর কৃষি জমি অনুর্বর হয়ে পড়ছে। লবণাক্ততার কারণে মাটিতে ফসলের উৎপাদন মারাত্মকভাবে কমে যাচ্ছে । একসময় যে জমিতে প্রচুর ধান ফলত, আজ তা লবণাক্ততার কারণে ফসল ফলানোর অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এর ফলে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ছে এবং কৃষকরা তাদের জীবিকা হারাচ্ছে। মিঠা পানির মাছের উৎসগুলোও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, যা গ্রামীণ অর্থনীতি এবং মানুষের পুষ্টির উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
১১. বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের ভয়াল রূপ
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আবহাওয়ার ধরন বদলে যাওয়ায় বন্যা এবং ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘনঘন এবং আরও তীব্র আকারে আঘাত হানছে। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়গুলো আগের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী হয়ে উপকূলে আঘাত হানছে, যার ফলে জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। জার্মানভিত্তিক সংস্থা 'জার্মান ওয়াচ'-এর ২০১৯ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান নবম । অন্যদিকে, অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পানির ঢলে আকস্মিক বন্যা দেখা দিচ্ছে, যা ঘরবাড়ি, ফসল এবং অবকাঠামো ধ্বংস করে দিচ্ছে।
১২. তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও মরুকরণের হাতছানি
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশের গড় তাপমাত্রা ক্রমাগত বাড়ছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ৫০ বছরে দেশের গড় তাপমাত্রা ০.৫° সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেয়েছে । ধারণা করা হচ্ছে, ২১০০ সাল নাগাদ এই তাপমাত্রা ২.৪° সেলসিয়াস পর্যন্ত বাড়তে পারে । এর ফলে দেশের উত্তরাঞ্চলে খরার প্রবণতা বাড়ছে এবং মরুকরণের ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। পর্যাপ্ত বৃষ্টির অভাবে মাটি শুকিয়ে যাচ্ছে, নদী-নালা পানিশূন্য হয়ে পড়ছে এবং ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতি কৃষি, জীবিকা এবং জনস্বাস্থ্যের জন্য এক মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করছে।
১৩. নতুন দুর্যোগ বজ্রপাত
আগে বজ্রপাতকে এতটা ভয়ংকর দুর্যোগ হিসেবে গণ্য করা হতো না। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় বজ্রপাতের সংখ্যা এবং এর তীব্রতা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। এটি এখন একটি নতুন প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। গত কয়েক বছরে বজ্রপাতের কারণে শত শত মানুষ প্রাণ হারিয়েছে, যাদের বেশিরভাগই কৃষক এবং খোলা মাঠে কর্মরত শ্রমিক । বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞান সাময়িকী 'ন্যাচার'-এর এক প্রতিবেদনেও জলবায়ু পরিবর্তনকেই বিশ্বজুড়ে বজ্রপাত বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ।
আরো পড়ুন : বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ২০২৪ প্রবন্ধ রচনা
১৪. জীববৈচিত্র্য ও সুন্দরবনের সংকট
জলবায়ু পরিবর্তন বাংলাদেশের অমূল্য প্রাকৃতিক সম্পদ এবং জীববৈচিত্র্যকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন, যা আমাদের প্রাকৃতিক সুরক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করে, তা আজ মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন। সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ার কারণে সুন্দরবনের সুন্দরীসহ অনেক গাছপালা মরে যাচ্ছে। এর ফলে বিশ্ববিখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিত্রা হরিণসহ অসংখ্য বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল এবং প্রজননক্ষেত্র ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দেশের অনেক মিঠা পানির মাছ, পাখি এবং অন্যান্য প্রাণী বিলুপ্তির পথে, যা আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করছে।
১৫. স্বাস্থ্য ঝুঁকি ও রোগের প্রাদুর্ভাব
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে জনস্বাস্থ্যের উপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। ঘনঘন বন্যা এবং জলাবদ্ধতার কারণে ডায়রিয়া, কলেরা, টাইফয়েডের মতো পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়ছে। আবার, তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়ার মতো মশাবাহিত রোগের প্রকোপও বৃদ্ধি পাচ্ছে। লবণাক্ত পানি ব্যবহারের কারণে উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের, বিশেষ করে গর্ভবতী নারীদের উচ্চ রক্তচাপসহ নানা ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিচ্ছে। এছাড়াও, বিশুদ্ধ খাবার পানির অভাব, অপুষ্টি এবং বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সৃষ্ট মানসিক চাপ মানুষের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
১৬. বাস্তুচ্যুতি ও জলবায়ু শরণার্থী
নদীভাঙন, বন্যা, ঘূর্ণিঝড় এবং লবণাক্ততার কারণে প্রতি বছর বাংলাদেশের উপকূলীয় এবং নদী তীরবর্তী অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ তাদের ঘরবাড়ি ও জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ছে। বেঁচে থাকার তাগিদে এই অসহায় মানুষগুলো শহরের বস্তিগুলোতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছে, যাদেরকে 'জলবায়ু শরণার্থী' বলা হয় । এর ফলে শহরগুলোর উপর জনসংখ্যার চাপ বাড়ছে এবং নাগরিক সুযোগ-সুবিধা, যেমন—শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আবাসন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এই অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতি একটি বড় ধরনের সামাজিক সংকট তৈরি করছে, যা দেশের সার্বিক উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করছে।
১৭. বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ
জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকার অত্যন্ত সচেতন এবং বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সরকার নিজস্ব অর্থায়নে 'জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড' গঠন করেছে, যা উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে একটি পথিকৃৎ উদ্যোগ । এই তহবিলের মাধ্যমে দুর্যোগ মোকাবিলা, অভিযোজন এবং প্রশমনমূলক বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
১৮. আন্তর্জাতিক উদ্যোগ ও বাংলাদেশ
জলবায়ু পরিবর্তন একটি বৈশ্বিক সমস্যা হওয়ায় এর সমাধানে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা অপরিহার্য। এই লক্ষ্যে জাতিসংঘ জলবায়ু পরিবর্তন ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন (UNFCCC) -এর আওতায় প্রতি বছর বিশ্ব সম্মেলন (COP) আয়োজন করে । ২০১৫ সালে প্যারিস সম্মেলনে পৃথিবীর প্রায় সব দেশ বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখতে সম্মত হয় । বাংলাদেশ এসব আন্তর্জাতিক আলোচনায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে এবং জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য উন্নত বিশ্বের কাছ থেকে আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দাবি করে আসছে। বিশেষ করে 'লস অ্যান্ড ড্যামেজ' বা ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় একটি পৃথক তহবিল গঠনের জন্য বাংলাদেশ জোরালো দাবি জানাচ্ছে ।
১৯. জলবায়ু পরিবর্তনে ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকা
জলবায়ু পরিবর্তনের এই ভয়াবহ সংকট মোকাবিলায় আমাদের প্রত্যেকেরই নিজ নিজ জায়গা থেকে দায়িত্ব পালন করতে হবে। শিক্ষার্থী হিসেবে আমরাও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারি। আমরা বিদ্যুৎ ও পানির অপচয় রোধ করতে পারি, যা জ্বালানি সাশ্রয়ে সাহায্য করবে। অপ্রয়োজনে লাইট, ফ্যান বন্ধ রাখা এবং রিসাইক্লিং বা পুনর্ব্যবহারের অভ্যাস গড়ে তোলাও জরুরি। আমরা আমাদের জন্মদিন বা বিশেষ দিনগুলোতে গাছ লাগাতে পারি এবং অন্যদেরও বৃক্ষরোপণে উৎসাহিত করতে পারি। এছাড়াও, আমরা নিজেরা জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে আরও জানতে পারি এবং আমাদের পরিবার ও বন্ধুদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে পারি। আমাদের ছোট ছোট সম্মিলিত প্রচেষ্টাই বড় পরিবর্তন আনতে পারে।
২০. উপসংহার
জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের সময়ের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা শুধু সরকার বা কোনো সংস্থার একার পক্ষে সম্ভব নয়, এর জন্য প্রয়োজন সম্মিলিত প্রচেষ্টা। আমাদের মনে রাখতে হবে, এই পৃথিবী আমাদের একমাত্র আবাসস্থল। একে রক্ষা করার দায়িত্বও আমাদেরই। আমাদের এমনভাবে জীবনযাপন করতে হবে, যা পরিবেশের উপর সর্বনিম্ন চাপ সৃষ্টি করে। উন্নত দেশগুলোকে তাদের কার্বন নিঃসরণ কমানোর প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে হবে এবং বাংলাদেশের মতো ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোকে সহায়তার জন্য এগিয়ে আসতে হবে। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা নিশ্চয়ই এই সংকট কাটিয়ে উঠতে পারব এবং আগামী প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ ও বাসযোগ্য সবুজ পৃথিবী রেখে যেতে পারব।
শেষ কথা: জলবায়ু পরিবর্তন ও বাংলাদেশ রচনা ২০ পয়েন্ট
প্রিয় পাঠক, উপরের রচনাটি পড়ে নিশ্চই আপনি আপনার চাহিত জলবায়ু পরিবর্তন ও বাংলাদেশ রচনা ২০ পয়েন্ট, বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক উষ্ণায়ন রচনা এবং জলবায়ু পরিবর্তন ও বাংলাদেশে এর প্রভাব বিষয়ক তথ্যবহুল রচনাটি পেয়েছে। বুঝতেই পেরেছেন রচনাটি খুবই সুন্দর করে সাবলীল ও সহজ ভাষায় সকল ক্লাসের শিক্ষার্থীদের উপযোগী করে প্রস্তুত করা হয়েছে। মাধ্যমিক স্থরের যেমন ক্লাস ৬, ক্লাস ৭, ক্লাস ৮, ক্লাস ৯ ও ক্লাস ১০ এর শিক্ষার্থীরা যদি আরো ছোট আকারের জলবায়ু পরিবর্তন ও বাংলাদেশ রচনা পেতে চান তাহলে এই রচনা থেকে কয়েকটি পয়েন্ট বাদ দিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। রচনাটি কেমন লাগলো জানিয়ে কমেন্ট করুন। ভাল লাগলে বন্ধুদের সাথে সেয়ার করুন।
ফ্লোনেস্ট বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url